ছবি: প্রতীকী।
অর্ণব আইচ: পুলিশ ধাওয়া করেছে, তা বুঝতে পারামাত্রই আলো নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে লুকিয়ে পড়েছিল। তবু শেষরক্ষা হল না। শ্বশুরবাড়ির অন্ধকার (Dark) ঘরে টর্চ জ্বালিয়ে ‘জামাই’কে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ধৃতের নাম শুভজিৎ ভট্টাচার্য। তার বিরুদ্ধে ৩৬ লক্ষ টাকা প্রতারণার (Fraud) অভিযোগে রুজু হয়েছে মামলা।
পুলিশ সূত্রে খবর, হুগলির শ্রীরামপুরের (Sreerampur) বাসিন্দা শুভজিৎ ভট্টাচার্য উত্তর কলকাতার জোড়াবাগানের একটি পরিবহণ সংস্থায় কাজ করতেন। মূলত যে ট্রাকগুলি বাইরের রাজ্য থেকে কলকাতায় (Kolkata) মালপত্র নিয়ে আসে, সেগুলিকে সংস্থার হয়ে টাকা দেওয়ার কাজ ছিল ওই ব্যক্তির। মূলত ট্রাকের চালকের হাতেই ওই টাকা দিতে হত। পরিবহণ সংস্থার কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নিতেন শুভজিৎ। কিন্তু ক্রমে সংস্থার কর্তাদের কাছে ট্রাকের চালক ও মালিকরা অভিযোগ জানাতে শুরু করেন যে, তাঁরা সময়মতো টাকা পাচ্ছেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের আংশিক টাকা দেওয়া হয়। আবার কখনও তাঁদের টাকা দেওয়া হচ্ছে না, এমনও অভিযোগ ওঠে। সংস্থার পক্ষ থেকে যখন অডিট করা হয়, তখন ৩৬ লক্ষ টাকার গরমিল মেলে।
দেখা যায়, ওই বিপুল পরিমাণ টাকা ট্রাক মালিকরা পাননি। এই ব্যাপারে শুভজিৎকে জিজ্ঞাসা করেও কোনও সদুত্তর মেলেনি। এর পরই জোড়াবাগান থানায় সংস্থার পক্ষ থেকে শুভজিৎ ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে জানতে পারে যে, ট্রাক মালিকদের প্রতারণার ৩৬ লক্ষ টাকা শুভজিৎ হাতিয়ে নিয়ে তা বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রেখেছেন। সেই অ্যাকাউন্টগুলি তাঁর নিজের, স্ত্রী, কয়েকজন আত্মীয় ও বন্ধুর নামে। কিন্তু পুলিশ তদন্ত শুরু করতেই শুভজিৎ গা-ঢাকা দেন।
শ্রীরামপুরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও তাঁর সন্ধান মেলেনি। তল্লাশি চালানো হয় আত্মীয় ও বন্ধুদের বাড়িতেও। মোবাইল বন্ধ করে রাখেন তিনি। এর মধ্যেই পুলিশ খবর পায় যে, কয়েকজন আত্মীয়র মোবাইল থেকে পরিচিতদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছেন। সেই সূত্রেই পুলিশ জানতে পারে, শুভজিৎ গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন পূর্ব কলকাতার সার্ভে পার্ক (Survey Park) এলাকায়। পুলিশ আধিকারিকরা জানতে পারেন যে সেখানেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি।
শনিবার সন্ধ্যায় যখন ওই বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়, দেখা যায় ঘর অন্ধকার। কিন্তু লোকজনের উপস্থিতি পুলিশ টের পায়। জোর করে পুলিশ ঘরের ভিতর ঢুকে দেখে, প্রত্যেকটি ঘরের আলো নেভানো। মেন সুইচও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই অন্ধকার ঘরে টর্চ জ্বালিয়ে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। ঘরের এক কোণায় জামাকাপড়ের আড়ালে লুকিয়ে থেকেও শেষরক্ষা হয়নি ওই ব্যক্তির। টর্চের আলো মুখ পড়তেই মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া চেষ্টা করেন তিনি। যদিও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতকে জেরা করে ওই অ্যাকাউন্টগুলির সন্ধান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.