অর্ণব আইচ: কার যোগসাজশে কসবায় ভুয়ো টিকাকরণ কাণ্ডের (Kasba Fake Vaccination Case) জাল বিস্তার করল দেবাঞ্জন দেব? এই প্রশ্নে মুখর চতুর্দিক। তদন্তের জাল গোটাতে চলছে টানা জিজ্ঞাসাবাদ। দেবাঞ্জনকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হল। প্রত্যেককেই আজ আলিপুর আদালতে পেশ করা হবে। এদিকে, কসবা কাণ্ডে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে তদন্তের দাবিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতেরা হল সুশান্ত দাস, রবিন শিকদার এবং শান্তনু মান্না। দফায় দফায় জেরা করার পরেই গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। বছর চুয়ান্নর সুশান্ত সল্টলেক সেক্টর টু’র বাসিন্দা। ৩১ বছর বয়সি রবীন শিকদার বারাসতের বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, এই দু’জন আধিকারিকের নাম ভাঁড়িয়ে খোলা কলকাতা পুরসভার অ্যাকাউন্ট সামলাত। সর্বত্র সইও করত দু’জনে। ভ্যাকসিন কাণ্ডে অপর ধৃত শান্তনু মান্না তালতলার বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, সে নিজেকে ভুয়ো IAS দেবাঞ্জনের অফিসের ম্যানেজার বলেই পরিচয় দিত সর্বত্র। ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে এই তিনজনের ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
কসবা ভুয়ো টিকা কাণ্ডে তদন্তে সিট গঠন করা হয়েছে। লালবাজারে গোয়েন্দাপ্রধান মুরলিধর শর্মা জানান, ডিসি (চতুর্থ ব্যাটালিয়ন) এখন ডিসি (ডিডি)র দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই কাজ করতে শুরু করেছে ‘সিট’। দেবাঞ্জনের কসবার রাজডাঙার অফিসে ফের তল্লাশি চালিয়ে কলকাতা পুরসভা ও নবান্নের লেটারহেডে প্রচুর নথিও চিঠিপত্র মিলেছে। অফিসে সাহায্যপ্রার্থীদের নামে নবান্নের বহু কর্তাকে সে নিজেকে পুরসভার যুগ্ম কমিশনার পরিচয় দিয়ে চিঠি লিখত। কিন্তু সেগুলি পরে আর পাঠায়নি। সে কলকাতা পুরসভার ঠিকাদারদের কাছে গিয়ে ‘সাব কনট্রাক্ট’ চাইত। এভাবেও সে প্রচুর টাকা রোজগার করেছে। বেহালা থানায় এক ব্যবসায়ী অভিযোগ জানান, পুরসভার টেন্ডারের নাম করে তাঁর কাছ থেকে দশ লাখ টাকা জালিয়াতি করেছে। পুরসভার স্টেডিয়াম তৈরির টেন্ডারের নাম করে ৯০ লাখ টাকা জালিয়াতির অভিযোগও তুলেছেন কসবার এক ব্যবসায়ী।
তার ৩৬ লাখ টাকা তার একটি ব্যাঙ্কেও জমা দেন ব্যবসায়ী। এক পুরকর্তার সই ব্যবহার করে গাড়িতে নীল আলো জ্বালিয়ে চলাফেরার অভিযোগে দেবাঞ্জনের (Debanjan Deb) বিরুদ্ধে প্রথমে নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করে পুরসভা। এরপর এক পুরকর্তার সই জাল করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে পুরসভার অ্যাকাউন্ট খোলার অভিযোগে নিউ মার্কেট থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের হয়। মুচিপাড়া থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। ইতিমধ্যে দেবাঞ্জনের নিজের নামে একটি, অপর একটি কারেন্ট অ্যাকউন্ট ও পুরসভার নামে একটি অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। এগুলিতে বেশি টাকা নেই। তাই তার আরও ব্যাংকের সন্ধান করছে ‘সিট’। দেবাঞ্জনের কসবার অফিসে অন্তত বারোজন কাজ করতেন। তাঁদের পুরসভার নাম করেই নিয়োগ করা হয়। প্রত্যেককে বেতন দেওয়া হত। শুক্রবার তাঁর চারজন কর্মীকে লালবাজারে মুখোমুখি বসিয়ে পুলিশ জেরা করে।
এক ব্যক্তিকে দিয়ে জাল কোভিশিল্ডের লেবেলের ডিজাইন করে সে। শিয়ালদহের একটি ছাপাখানা থেকে প্রিন্ট বের করে। কর্মচারীদের দিয়ে অ্যামিকাসিনের ভায়ালের উপর আঠা দিয়ে ‘কোভিশিল্ড’ লেবেল লাগানো হত। গত চার মাস ধরে সে পুরসভার নাম করেই মাসে ৫২ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া দিয়ে তাতে নীল আলো লাগায়। বাণিজ্যিক গাড়ি হলেও ‘নিজ ক্ষমতায়’ সে গাড়ির নম্বরপ্লেটের ব্যাকগ্রাউন্ডের রং হলুদের বদলে সাদা রাখে। নবান্নের লেটারহেডে অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে এক প্রাক্তন বিএসএফ আধিকারিককে নিয়োগ করে সে। পুরসভার নাম করে একটি সেকেন্ড ডিভিশন ক্রিকেট ক্লাবও কেনার ছক কষেছিল সে। দেবাঞ্জনের দাবি, গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভসের ব্যবসা করতে করতেই সে পুর আধিকারিকদের ঘনিষ্ঠ হয়। ‘জনসেবা’র নামে সে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও চিকিৎসকদেরও পিপিই কিট দান করে। পুরসভার যে দালালচক্র কাজ করে, তাদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের নাম করেও দেবাঞ্জন জালিয়াতি করত কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.