ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: একবালপুর গণধর্ষণ কাণ্ডে এবার পুলিশের নজরে বাড়ির মালিক। তাকেও গ্রেপ্তার করল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই বাড়িমালিকের পরিকল্পনামাফিক ফ্ল্যাটে নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয়। এ নিয়ে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫ জন। আদালতের নির্দেশে আপাতত সোমবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতেই থাকবে অভিযুক্তরা। খাস শহরে গণধর্ষণের ঘটনায় আগামী সাতদিনের মধ্যে চার্জশিটের পেশের কথা ভাবছেন তদন্তকারীরা।
নির্যাতিতা ওই কিশোরীর বাবা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন তিনি। বাড়িতে সৎ মা এবং বাবা ছাড়া কেউই নেই কিশোরীর। তবে সৎ মায়ের সঙ্গে মোটেও ভাল সম্পর্ক নয়। তাই বাড়িতে থাকতে চাইত না ওই নাবালিকা। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়িতে সে জানায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও বাড়িতে ফেরে না নাবালিকা। তিনি রাত ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় মেয়েকে খোঁজেন। কোথাও না পেয়ে পর্ণশ্রী থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ মেয়েটি একাই পর্ণশ্রী থানায় চলে আসে।
পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে জানায়, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে মোমিনপুরে যায় সে। সেখানেই তার সঙ্গে আরও দুই যুবকের পরিচয় হয়। তারা জানায়, ভূকৈলাস রোডে তাদের একটি অনুষ্ঠান আছে। সেখানে তারা একসঙ্গে সময় কাটাবে। প্রস্তাবে রাজি হয় যায় মেয়েটি। ‘বন্ধু’দের সঙ্গে ওই নির্জন বাড়িটিতে যায়। সেখানেই ঘরের ভিতর ওই যুবকরা নিজেরা মদ্যপান করে। অন্য পানীয়র সঙ্গে মিশিয়ে জোর করেই মদ্যপান করানো হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে একটু বেশি পরিমাণ মদ খাইয়ে কিশোরীকে প্রায় বেহুঁশ করে ফেলা হয়। রাতভর তার উপর শুরু হয় যৌন নির্যাতন। কিশোরীর অভিযোগ অনুযায়ী, ওই অবস্থায় ৪ যুবকই তাকে গণধর্ষণ করে। সকালে উঠে কিশোরী পুরো বিষয়টি বুঝতে পারে। নিজেই ফিরে আসে পর্ণশ্রীতে। কোনও ভয় না পেয়েই অভিযোগ জানাতে সোজা চলে যায় থানায়। কান্নাকাটির পর পুলিশকে গোটা ঘটনাটি জানায় সে।
মোমিনপুরে ঘটনাটি ঘটেছে, তাই একবালপুর থানায় মামলা পাঠানো হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পর্ণশ্রী থেকে অমরজিৎ চৌপাল ও মনোজ শর্মা এবং একবালপুর থেকে বিকাশ মল্লিক ও হৃত্বিক রাম নামে মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ধৃতদের বয়স ২১ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে বিকাশ মল্লিক নৃত্য প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। পর্ণশ্রীর বাসিন্দা হওয়ার সূত্রে অমরজিৎ ও মনোজের সঙ্গে পরিচয় হয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর। শনিবার দুপুরে ওই ফ্ল্যাটের মালিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, ওই বাড়িমালিকও ধর্ষণের পরিকল্পনায় সঙ্গত দিয়েছে ধৃতদের। সেই অভিযোগেই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এছাড়াও জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে একজন ছিল ওই নাবালিকার প্রেমিক। সে-ও ধর্ষণে মদত দেয় বলেই দাবি পুলিশ। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫ জন। আদালতের নির্দেশে আপাতত সোমবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতেই থাকবে অভিযুক্তরা। খাস শহরে গণধর্ষণের ঘটনায় আগামী সাতদিনের মধ্যে চার্জশিটের পেশের কথা ভাবছেন তদন্তকারীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.