গৌতম ব্রহ্ম: আটদিনের যমে-মানুষের লড়াই শেষ। শনিবার ভোর পাঁচটায় জীবনযুদ্ধে হার মানল পোলবার পুলকার দুর্ঘটনায় জখম ঋষভ। শুক্রবার রাতেই তার অবস্থা প্রায় চিকিৎসকদের হাতের বাইরে চলে যায়। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় পরিজনদের। বাবা-মা দৌড়ে আসেন এসএসকেএমে। ঋষভকে বাঁচানোর শেষ লড়াই চালিয়ে যান চিকিৎসকরা। তবে তাতেও লাভ হল না। পরিজনদের ছেড়ে অমৃতলোকের পথে পাড়ি দিল ছোট্ট ঋষভ।
১৪ ফেব্রুয়ারি স্কুল যাওয়ার জন্য শেষবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ঋষভ। সুস্থ অবস্থায় মায়ের সঙ্গে সেই শেষ দেখা। বাবা তুলে দিতে গিয়েছিলেন পুলকারে। হাত নেড়ে বাবাকে বিদায় জানিয়ে প্রাণোচ্ছ্বল ছোট্ট ঋষভ উঠে গিয়েছিল শেখ শামিমের পুলকারে। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়িতে খবর আসে ঋষভের পুলকার দিল্লি রোড ধরে স্কুলে যাওয়ার সময় পোস্টে ধাক্কা মেরে নয়ানজুলিতে উলটে গিয়েছে। তড়িঘড়ি চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আহতদের। কিন্তু ঋষভ এবং দিব্যাংশুর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক ছিল। তাই তাদের গ্রিন করিডরের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএমে। ফুসফুসে কাদাজল ঢুকে যাওয়ায় শ্বাস নিতে পারছিল না ছ’বছরের পড়ুয়া ঋষভ। তাই ECMO পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু হয় তার। দিন যত গড়িয়েছে ততই একের পর এক বিকল হতে শুরু করে নানা অঙ্গ। ক্রমশই কমছিল প্লেটলেট। রক্তে থাকা অন্যান্য উপাদানেরও তারতম্য ঘটছিল। শুক্রবার দুপুরেই চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, লিভার, কিডনি, ফুসফুস কাজ করছে না তার। সেই মতো ঋষভের চিকিৎসা শুরু হয়।
তবে শুক্রবার রাতে খুদে পড়ুয়ার অবস্থার আরও অবনতি হয়। বেশ কয়েক বোতল রক্তও দেওয়া হয় খুদেকে। ভাবনা চলছিল ডায়ালিসিস করারও। কিন্তু খুদে কতটা ধকল সহ্য করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল চিকিৎসকদের। রাতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ঋষভকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা শুরু করেন চিকিৎসকরা। তবে তাতেও লাভ হল না। শনিবার ভোর পাঁচটার সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ছোট্ট ঋষভ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাল্টি অরগ্যান ফেলিওরে মৃত্যু হয়েছে পুলকার দুর্ঘটনায় জখম খুদে।
মৃত্যুসংবাদ পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছন ঋষভের পরিজন এবং পরিচিতরা। এসএসকেএমে যান কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঋষভের বাবা। শনিবারই ঋষভের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে খুদের দেহ। সাধারণত দুর্ঘটনাগ্রস্ত কারও মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করানো হয়। তবে ঋষভের দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। কারণ, খুদের পরিজনেরা চান না আর তাদের সন্তানের দেহ কাটাছেঁড়া হোক। সূত্রের খবর, ময়নাতদন্ত না হলে সকাল ৯টা নাগাদ ঋষভের দেহ পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। খুদের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পরই শ্রীরামপুরের বাড়িতে নেমেছে শোকের ছায়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.