স্টাফ রিপোর্টার: ঘুগনিতে ক্যানসারের বীজ! যেখানে সেখানে নয়, খাস কলকাতার হাসপাতাল চত্বরেই। মধ্য কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ এলাকায়, কলেজ স্ট্রিটে রাস্তার দুপাশে একের পর এক দোকান। সম্প্রতি সেখানেই হানা দিয়েছিল কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ। খাবারের গুণমান পরীক্ষা করতে গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ! ডিমের ঝোল আর ঘুগনিতে পাওয়া গিয়েছে বিষাক্ত মেটানিল ইয়েলো। যা কিনা বিষক্রিয়া তৈরি করে নিমেষে।
আসলে ‘মেটানিল ইয়েলো’ অ্যাজো শ্রেণির একটি রঞ্জক। রসায়ন বিভাগের ল্যাবরেটরিতে তা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেই গবেষণাগারের রাসায়নিকই (Chemical) এখন ছড়িয়ে পড়েছে খাবারের দোকানে! আচমকা অভিযান চালিয়ে তা জানার পর দ্রুত অভিযুক্ত দোকানের সমস্ত ঘুগনি, ডিমের ঝোল ফেলে দিয়েছেন কলকাতা পুরসভার (KMC) খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিকরা। ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI) বহুদিন আগেই ‘মেটানিল ইয়েলো’-র ব্যবহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাজারে হলুদের যা দাম তার চেয়ে সস্তায় পাওয়া যায় এই সিন্থেটিক রং। তা মেশালে খাবারের রং হলুদও হয় অনেক বেশি। পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিকরা মনে করছেন, বিক্রেতারা অত্যধিক লাভের লক্ষ্যে এই সিন্থেটিক রং মিশিয়েই খাবার রংচঙে করছেন।
কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ডা. তরুণ সাফুই জানিয়েছেন, কলেজ স্ট্রিট (College Street)এলাকার আটটি দোকানে পরিদর্শনে গিয়েছিল খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের টিম। মোট ২৭ রকম খাবারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে দুটি দোকানের ডিমের ঝোল আর ঘুগনিতে পাওয়া গিয়েছে বিষাক্ত মেটানিল ইয়েলো। পুরসভার তরফ থেকে কলেজ স্ট্রিট এলাকায় সমস্ত দোকানিদের বলা হয়েছে, ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর দোকানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এমনভাবে তা রাখতে হবে যেন ক্রেতাদের নজরে পড়ে। শুধু তাই নয় প্রতিটি কেনাবেচার বিলের রেকর্ড রাখতে বলা হয়েছে বিক্রেতাদের। ডা. তরুণ সাফুই জানিয়েছেন, রেস্তরাঁয় নোংরা হাতে খাবার বানানো, অপরিষ্কার জায়গায় রান্নাবান্না কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। বিক্রেতাদের বলা হয়েছে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
এর আগেও একাধিক খাবারের বিষাক্ত মেটানিল ইয়েলো পাওয়া গিয়েছিল। বেসনের লাড্ডু, রান্নার গুঁড়ো হলুদে সিন্থেটিক এই বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার নজরে এসেছিল কলকাতা পুরসভার। এবার খোদ মধ্য কলকাতার কলেজ স্ট্রিট এলাকার একাধিক ‘ফুড জয়েন্ট’-এ মিলল এই ক্ষতিকর রং। মেটানিল ইয়েলো সরাসরি বিষ না হলেও এর মধ্যে অবস্থিত মেটাবোলাইট এবং ডাইফেনালামিনকে ‘কার্সিনোজেন’ বা ক্যানসারের কারণ হিসাবে দেখেন চিকিৎসকরা। অর্থাৎ দীর্ঘদিন এই রং খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। এই ‘কারসিনোজেনিক’ কারণেই মেটানিল ইয়েলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.