ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: নেওয়ার লোক অনেক। কিন্তু অত দেওয়ার লোক কই? নেই।
আশানুরূপ সংখ্যায় প্লাজমাদাতা (Plasma) না মেলায় অতএব থমকে আছে করোনা মোকাবিলার বহুচর্চিত প্লাজমা থেরাপির (Plasma Therapy) ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। বিস্তর তথ্যসাবুদ জোগাড় করে মাসদু’য়েক আগে ডিসিজিআই থেকে প্লাজমা থেরাপির (Plasma Therapy) জন্য অনুমোদন আদায় করেছিল কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা সিএসআইআরের অধীনস্থ যাদবপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি’ (আইআইসিবি)। সঙ্গী ছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সহযোগিতায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে করোনা (Covid-19 positive) রোগীদের উপর প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। এতে করোনামুক্তির ২৮ দিন পর সুস্থ হওয়া ব্যক্তির প্লাজমা (Plasma) আক্রান্তের দেহে প্রবেশ করিয়ে রোগ নিরাময়ের চেষ্টা চলে, যা অনেকাংশেই সফল বলে চিকিৎসকদের দাবি। তাঁদের ব্যাখ্যা, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের রক্তরস বা প্লাজমায় করোনা ভাইরাসের (Corona Virus) বিরুদ্ধে লড়াই করার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা কিনা কোভিড ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। প্রায় এক মাস ধরে এই কাজ চলছে। কিন্তু প্লাজমাদাতা না মেলায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। আইআইসিবি-র বিজ্ঞানী ড: দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “সব রকম ব্লাড গ্রুপের যথেষ্ট সংখ্যক প্লাজমা (Plasma) না মেলায় সমস্যা হচ্ছে। আশা করি, মিটে যাবে।”
আইডি সূত্রের খবর, গত এক মাসে ১২ জনকে প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। ডা: গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা যত বেশি মানুষ প্লাজমা (Plasma) দান করবেন, তত বেশি অসু্স্থের শরীরে তা প্রয়োগ করা যাবে। বোঝা যাবে, এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কতটা নির্ভরযোগ্য অস্ত্র।” চিকিৎসক যোগীরাজ রায়ের পর্যবেক্ষণ, “যত সংখ্যক সুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের মাত্র ২০ শতাংশ প্লাজমা (Plasma) দান করলেই সমস্যা অনেকটা মিটে যায়। এর জন্য দরকার সচেতনতা।” তবে এরই মধ্যে আশার খবর শুনিয়েছেন চিকিৎসক ডা. কুণাল সরকার। জানিয়েছেন, আজ সোমবার কলকাতার মেডিকা হাসপাতালে শুরু হবে করোনা রোগীদের জন্য প্লাজমা সংরক্ষণ ব্যবস্থা অর্থাৎ প্লাজমা ব্যাঙ্ক। এতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অনেকটাই সুবিধা হবে বলে মনে করছেন ডাক্তারবাবুরা।
নিয়ম অনুযায়ী অন্তত ৪০ জন করোনা আক্রান্তকে প্লাজমা (Plasma) দেওয়ার পর ট্রায়ালের বিস্তারিত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকে পাঠাতে হয়। সে তথ্য বিশ্লেষণ করে ডিসিজিআই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে। অন্যান্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মতো প্লাজমা থেরাপি (Plasma Therapy) কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করবে সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যার উপর। কিন্তু শুরু হওয়ার একমাসের মধ্যে আশানুরূপ দাতা না মেলায় প্রক্রিয়াটি থমকে যাওয়ায় চিকিৎসক মহলে আক্ষেপ দানা বাঁধছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রক্ত সঞ্চালন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক প্রসূন ভট্টাচার্যর মন্তব্য, “মূলত এ (A), বি (B) এবং এবি (AB) গ্রুপের প্লাজমার অভাব। এই তিনটি গ্রুপের প্লাজমার যথেষ্ট চাহিদা। তবে ও গ্রুপের প্লাজমা আছে।” কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, প্লাজমা দেওয়ার জন্য সুস্থ রোগীদের কাউন্সেলিং করা হলেও সেভাবে সাড়া মিলছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.