শুভঙ্কর বসু: উভয় পক্ষের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক হলে, পকসো আইনে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। একটি যৌন হেনস্থার মামলায় এমনই নজিরবিহীন পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাই কোর্টের (High Court)।
ঘটনা হল, ১৬ বছরের এক তরুণীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে নিম্ন আদালতে পকসো (Protection of Children from Sexual Offences) আইনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন বছর ২২-এর এক যুবক। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত। আদালতে তাঁর দাবি ছিল, ওই তরুণী তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের কথা আগেই স্বীকার করেছে। তরুণীর যখন যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছে তখন তার বয়স খতিয়ে দেখা দরকার। যেহেতু শারীরিক সম্পর্কে তরুনীর সম্মতি ছিল তাই এক্ষেত্রে হেনস্তার অভিযোগ তাঁর ক্ষেত্রে খাটে না।
এই মামলার শুনানিতেই বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণে বলেন, যদি উভয়পক্ষের সম্মতিতে শারীরিক মিলন হয়, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র পুরুষের ওপর দোষ চাপানো উচিৎ নয়। মহিলা ও পুরুষের শারীরিক গঠনে তফাৎ আছে বলেই এই অভিযোগ কেবলমাত্র পুরুষের বিরুদ্ধে আনা যায় না। পাশাপাশি বিচারপতির আরও মন্তব্য, “কারও বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্তের মানসিক অবস্থা, ম্যাচিওরিটি এবং অতীতের ঘটনা খতিয়ে দেখা দরকার। অভিযুক্ত ও অভিযোগকারিণী দু’জনের ক্ষেত্রে এগুলো দেখা জরুরি।” বিচারপতি বলেন, “অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য যেন পকসো আইনকে ব্যবহার না করা হয়। আদালত বাস্তবকে না বুঝতে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারে না। ঘটনার কার্য কারণ জানা প্রয়োজন। যদি অভিযোগকারিণীকে নাবালিকা বলে প্রমাণ করতেই হয়, তাহলে তার বয়স, মানসিক পরিণতি, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে হবে।”
পকসো আইন অনুযায়ী, কারও বয়স যদি ১৭ বছর ৩৬৪ দিন হয়, তাহলে পকসো আইনের আওতায় মামলা হবে ঠিকই। কিন্তু ওই বয়সী একজনের থেকে একদিনের বড় অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সী কোনও মানুষের ম্যাচিওরিটির কোনও তফাৎ থাকে কী? এরপরই মামলাকারী ও অভিযুক্ত দু’জনেই বর্তমানে পৃথক বৈবাহিক জীবন যাপন করছেন জানার পর যুবকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় দায়ের হওয়া অভিযোগটি খারিজ করে আদালত জানায়, ৩৭৬ ধারা তখনই কার্যকর হবে যখন অভিযোগকারিণীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিলনে বাধ্য করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.