অভিরূপ দাস: করোনা (Coronavirus) আবহে কাজের চাপ দ্বিগুণ। অথচ বেতন হচ্ছে না। মাথায় হাত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনে ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর প্রথম বর্ষের স্নাতকোত্তরের পড়ুয়াদের। টানা চার মাস বেতন না পেয়ে ক্লাস বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন পড়ুয়ারা। বসেছেন অবস্থান বিক্ষোভে। তাতে বরফ গলা তো দূর আরও রুষ্ট কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, ডিরেক্টর উৎপলকুমার চট্টোপাধ্যায় পিজিটিদের বলেছেন, অবস্থান বিক্ষোভ না তুললে অদূর ভবিষ্যতে অসুবিধায় পড়তে হবে।
বেতন সমস্যা সমাধানের জন্য পিজিটি চিকিৎসকরা অনুরোধ করেছেন প্রতিষ্ঠানের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর ডা. এস বি চৌধুরির কাছে। কিন্তু বারবার বলেও কোনও লাভ হয়নি। ডা. স্মিতা দলুই বলেন, “অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করার আগে বারবার আমরা অ্যাডিশনাল ডিরেক্টরকে জানাই। কিন্তু সমস্যা সমাধানের থেকে বিক্ষোভ বন্ধ করাই ছিল কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য। কেন সঠিক সময়ে রোগী দেখেও বেতন পাচ্ছেন না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা?” অভিযোগ, গত চার মাস ধরে নানান টালবাহানা চলছে বেতন নিয়ে। ২৬ জন পিজিটি জানিয়েছেন, কখনও কর্তৃপক্ষ বলছে হোস্টেলের ফর্ম জমা দিলেই বেতন হবে। কখনও আশা দিচ্ছেন হোস্টেলের ডিমান্ড ড্রাফট জমা করা হলেই বেতন ঢুকবে। গত চার মাস ধরে এহেন ‘কুমির ছানা’ দেখে ক্লান্ত পিজিটিরা। তাঁদের কথায়, “আমরাই বোধহয় একমাত্র যাঁদের পুজোর সময়েও বেতন হয়নি। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই আবহে রোগী দেখতে হচ্ছে।”
বুধবারও কলকাতার দপ্তরে বিক্ষোভ দেখান পিজিটিরা। এই বিক্ষোভে পিজিটিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসকদের অন্যতম সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম।ওই ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ডা. কৌশিক চাকি জানিয়েছেন, “করোনা আবহে জনস্বাস্থ্য বিষেশজ্ঞদের ভূমিকা প্রশ্নাতীত। এই সময় জুনিয়র ডাক্তাররা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। তার পরেও বেতন হচ্ছে না। পৃথিবীর আর কোনও দেশে এমন ঘটনা হয় না। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা নেই। কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে এই প্রতিষ্ঠানের স্নাতকোত্তরের ছাত্রছাত্রীদের বেতন দিতে হবে।”
আন্দোলনকারী চিকিৎসক স্মিতা দলুই জানিয়েছেন, ইন্সটিটিউট অফ হাইজিন এন্ড পাবলিক হেলথের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছিল ১০ টি আসনের আর্থিক ছাড়পত্র না আসার জন্যেই বেতন হচ্ছে না কারও। সেটা সেপ্টেম্বরের কথা। দু’মাস পেড়িয়ে গেলেও এখনও কেন ছাড়পত্র এল না? অভিযোগ বারবার নানান অছিলায় দিল্লি যাওয়া এড়িয়ে যাচ্ছেন ইন্সটিটিউটের আধিকারিকরা। এমবিবিএস পাশ করার পর স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনার জন্য নিট-পিজি পরীক্ষা দিয়ে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ-এ ভরতি হয়েছেন এই পড়ুয়ারা। কোভিড আবহে আর সকলের মতো তাঁদেরও পরিশ্রম দ্বিগুণ। কিন্তু জুলাই মাস কোনও বেতন নেই।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, বেতনের বিষয়ে ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর ডিন দেবাশিস দত্তকে জানানো হয়েছে। জবাব এসেছে,ফাইলটা ডিপার্টমেন্ট অফ এক্সপেন্ডিচারে পাশ হয়ে আসবে। আদৌ তা কবে আসবে তা নিয়েই ধন্দ্বে পড়ুয়ারা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অধীনে এই সংস্থা জনস্বাস্থ্য বিষয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কেন্দ্রই বেতন দিয়ে থাকে। কী কারণে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের তরফে পুণ্যব্রত গুন জানিয়েছেন, “ট্রেনিং শুরু হয়েছে চার মাস। অথচ বেতন পাচ্ছেন না। কর্তৃপক্ষের কোনও উদ্যোগ নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের বেতন দেওয়া হোক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.