দীপঙ্কর মণ্ডল: আকাশের সব মেঘ যেন তাকেই ঘিরে রেখেছে। পাটুলির গৃহবন্দি ছাত্রটির খুব মনখারাপ। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়ার প্রস্তুতি চলছিল। করাল করোনা ভেস্তে দিয়েছে সেই স্বপ্ন। আতঙ্কে ঘর অন্ধকার করে সে বসে থাকে। কারো সঙ্গে কথা বলে না। কিছুই তাঁর ভালো লাগে না। তবে কয়েকদিন হল এই ছেলের মধ্যেই বেশ পরিবর্তন। হতাশার জাল ছিঁড়ে তাকে বের করে এনেছে ‘মিউজিক থেরাপি’ (Music Therapy)।
যাদবপুর বিধানসভা এলাকার কয়েকটি পাড়ায় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে রবীন্দ্রসংগীত। কখনও বাজছে ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’। কখনও শোনা যাচ্ছে ‘আলোকের এই ঝর্ণা ধারায় ধুইয়ে দাও’। স্থানীয় পুর কর্তৃপক্ষ ও কলকাতা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে গোটা পাড়ায় ছোট ছোট লাউড স্পিকার লাগানো হয়েছে। ধীর লয়ে রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি চলছে বাছাই করা অন্য ‘পজিটিভ গান’ও। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’, ‘আগুনের পরশমণি’ বা ‘আমি বাংলায় গান গাই’—এর মতো গান। বাড়িতে আটকে থাকা ছাত্রছাত্রীরাই শুধু নয়, বয়স্ক-সহ সবাই বেশ খুশিতে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “বুকের মধ্যে কেমন যেন চাপ হয়ে থাকা কষ্ট হচ্ছিল। কী এক হতাশা ক্রমশ গ্রাস করছিল আমাদের। পুরসভা ও পুলিশের উদ্যোগে ‘মিউজিক থেরাপি’ আমাদের সব ক্লান্তি কাটিয়ে দিয়েছে।”
লকডাউনের একঘেয়ে আতঙ্কের মধ্যে এই দখিনা হাওয়া বইছে কলকাতার ১০১ নং ওয়ার্ডে। পুরপ্রতিনিধি বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, “বাইপাসে আমরা বিকেলে রবীন্দ্রসংগীত বাজাই। সেখান থেকেই এই আইডিয়া আসে। পাটুলি থানার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আমাদের ওয়ার্ডের পাটুলি, রায়পুর ও বীরনগর—সহ পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্রসংগীত ও নানা রকম আনন্দের গান বাজানো হচ্ছে।” বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা অবধি চলছে গান। প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর থাকছে করোনা মোকাবিলার সচেতনতা ও লকডাউন মেনে চলার আবেদন। পাড়ায় পাড়ায় বসানো হয়েছে ছোট ছোট সাউন্ড বক্স। করোনা আতঙ্কের মধ্যেও মানুষ খুঁজে নিচ্ছেন গানের আশ্রয়। প্রতি তিন দিন অন্তর গানগুলি বদলে দেওয়া হচ্ছে।
২০১১ সালে রাজ্যে সরকারি ক্ষমতা হস্তান্তরের পর মহানগরের বিভিন্ন ক্রসিংয়ে রবীন্দ্রসংগীত চালু হয়। অভিনব সেই উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছিল গোটা দেশে। করোনা সতর্কতায় এখন গোটা দেশ গৃহবন্দি। ৮ মে রবীন্দ্রজয়ন্তী। ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন বাড়িয়েছে কেন্দ্র। যদি এই নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে লকডাউন উঠে যায় তারপরও কি এই মিউজিক থেরাপি চলবে? বাপ্পাদিত্য জানিয়েছেন, “যতদিন লকডাউন চলবে ততদিন পাড়ায় গান শোনানোর পরিকল্পনা হয়েছে। রবীন্দ্রজয়ন্তী নিয়ে এখনও কিছু ভাবিনি।” তবে গানই যে হতাশা কাটিয়ে ওঠার মোক্ষম ওষুধ হতে পারে ও আঁধার কাটিয়ে জীবনে আশার আলো আনতে পারে তা প্রমাণ করল লকডাউন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.