নব্যেন্দু হাজরা: বিপদের যেন সীমা পরিসীমা নেই। পাতালপথ সম্প্রসারণের জন্য সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজের শুরু থেকে যে বিপদের সূত্রপাত, ৫ দিন কেটে গেলেও তার সামাল দেওয়া যায়নি। বুধবার বিকেলে বউবাজারের স্যাঁকরা পাড়ার এক বাড়ির অর্ধেক ভেঙে পড়েছিল। আর রাতেই সেই ভাঙন সম্পূর্ণ হল। মাঝরাতে বাকি বাড়িটুকুও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে কয়েক মিনিটের মধ্যে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত
হল। এনিয়ে গত ৫ দিনে ৬টি বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে গেল। ঘরছাড়া বহু বাসিন্দা। এমনকী রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়কেও আবাসন খালি করে দিতে বলা হয়েছে। এতদিনের পৈতৃক ভিটে ছাড়ার যন্ত্রণা বুকে চেপেই তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে জিনিসপত্র গুটিয়ে বাড়ির মায়া ত্যাগ করেছেন।
আর এখানেই মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে বউবাজারের আদি বাসিন্দাদের। আগে প্রাণ, তারপর বসতভিটে। চোখের সামনে একের পর এক বাড়ি ভাঙতে দেখে এমনই ভেবেছিলেন বাসিন্দারা। তাই মেট্রো কর্তৃপক্ষের কথামতো পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন আশেপাশের হোটেলে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীও পড়ে ছিল বাড়িতেই। এভাবেই বিপদ থেকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অন্তত ৫০০ বাসিন্দাকে। কিন্তু এবার মেট্রো কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত এবার একবাক্যে মেনে নিতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই বৃহস্পতিবার সকালে স্যাঁকরা পাড়া লেন, দুর্গা পিতুরী লেনের দেখা গেল অন্য ছবি।
নিজের বাড়ি ছেড়ে যাবেন না, মাইক নিয়ে এরই প্রচারে নামলেন বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য একটাই, মেট্রোর কাজের জন্য বিপদ নেমেছে। কিন্তু জরুরিভিত্তিতে সেই সমস্যার সমাধান না করে কেন বাড়ি থেকে তাঁদের বের করে নতুন বাড়ি নির্মাণের মতো দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মেট্রো? তাঁরাই বা কেন নিজেদের এতদিনকার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যাবেন। তাই এবার বাড়ি না ছাড়ার পালটা প্রচার শুরু হয়েছে বউবাজার এলাকায়। তাতে সাড়াও মিলছে। অনেকেই এখন বাড়ি ছেড়ে হোটেলে যেতে বেঁকে বসছেন। বিক্ষিপ্ত ক্ষোভও দেখা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে।
ঘটনার পর এলাকা পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রী নিজে মেট্রো কর্তাদের ডেকে বৈঠক করেন। বিপর্যয় মোকাবিলায় কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া ছাড়াও মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কোর গ্রুপ তৈরি করে দেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় তাঁরা নিজেরা আবার বৈঠকে বসছেন আজই।
ছবি: অরিজিৎ সাহা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.