গৌতম ব্রহ্ম: কালিয়াগঞ্জে নাবালিকার মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “কালিয়াগঞ্জে পরিকল্পিতভাবে চক্রান্ত করেছে বিজেপি। যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা দুঃখজনক। কিন্তু তারপর যা যা হয়েছে, সবটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বাইরে থেকে লোক এনে জল্লাদগিরি করেছে বিজেপি।” এর নেপথ্যে দিল্লির হাত থাকতে পারে বলেও ধারনা মমতার।
শুক্রবার কালিয়াগঞ্জে ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয় গোটা রাজ্য। প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি (BJP)। সিবিআই তদন্তের দাবি ওঠে। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশকর্মী নাবালিকার দেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। যার জেরে সাসপেন্ড করা হয় চার এএসআই (ASI) পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিককে। এসবের মধ্যে আবার মঙ্গলবার আদিবাসীদের বিক্ষোভে কালিয়াগঞ্জজুড়ে তাণ্ডব চালায় বিক্ষোভকারীরা। থানায় আগুন লাগানো হয়, বেশ কিছু গাড়িতে আগুন লাগানো হয়, একাধিক দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। এদিকে বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু পুলিশকর্মীকে মারধর করেছে বিক্ষোভকারীরা।
এসব কিছুর নেপথ্যেই বিজেপির ষড়যন্ত্র দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা বলেন,”এসব কিছুর নেপথ্য ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। সাধারণ মানুষ এটা করতে পারে না। বিহার থেকে লোক এনে কালিয়াগঞ্জে তাণ্ডব চালিয়েছে বিজেপি। গুন্ডামি, জল্লাদগিরি করেছে। পুলিশের মেয়েদের গায়ে হাত তুলেছে। আগুন লাগিয়েছে, পাথর ছুঁড়েছে। পুরোটাই পরিকল্পিত।” মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট অভিযোগ, “এই পরিকল্পনার নেপথ্যে নিশ্চিতভাবেই দিল্লির হাত আছে। দিল্লির কারা কারা জড়িত সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু এর নেপথ্যে দিল্লির হাত আছে।”
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “মেয়েটার জন্য আমাদেরও খারাপ লাগছে। আমরা ওই পরিবারটার পাশে থাকব। পুরোটাই আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। মেয়েটার সঙ্গে ছেলেটার সম্পর্কও ছিল। সবটাই পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। কিন্তু বিজেপি যেভাবে বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে গুন্ডামি করেছে, পাথর ছুঁড়েছে, সেটারও তদন্ত হোক।” মৃতদেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেটাও মমতার নজরে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশের ভুল মেনে নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মৃতদেহ ওইভাবে নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু নিয়ে যাবে কী করে, পাথর ছুঁড়েছে। বিক্ষোভের নামে পাথর ছোঁড়া হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, “যারা বিক্ষোভের নামে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হোক। একসঙ্গে দুটি ঘটনার তদন্ত হবে। দলমত নির্বিশেষে গ্রেপ্তার করতে হবে।” পুলিশকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, “যারা দোষ করেছে তাঁদেরও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করুন। ইডি-সিবিআই যেভাবে করে। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত না করলে এদের গুন্ডামি কমবে না। বিজেপি টাকা দিয়ে যদি সাহায্য করে সেটা বিজেপির ব্যাপার।”
কালিয়াগঞ্জের তাণ্ডবের জন্য সরাসরি বিজেপিকে তোপ দাগলেও অসমর্থিত সূত্র বলছে, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ মমতা (Mamata Banerjee)। বিশেষ করে যেভাবে ভিডিওতে পুলিশকে মার খেতে দেখা গিয়েছে, তাতে বেশ অসন্তুষ্ট মমতা। সূত্র বলছে, পুলিশ কর্তাদের কাছে এ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “পুলিশের ইন্টেলিজেন্স কেন ঠিকমতো কাজ করছে না? আমি ছবিটা দেখলাম পুলিশকে মারছে, পুলিশ কি হাতে বালা পরে রয়েছে? যারা এই ধরনের কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি কেউ মারা যায় এভাবে মৃতদেহ বস্তায় নিয়ে যাবে? পুলিশকে পাথর ছুঁড়ে মারছে, এত সাহস ওরা কোথা থেকে পাচ্ছে? আমি কিন্তু টলারেট করবো না?” মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভপ্রকাশ করার আগেই অবশ্য কালিয়াগঞ্জে সক্রিয় পুলিশ। গোটা এলাকায় এই মুহূর্তে টহলদারি চালাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। নামানো হয়েছে RAF। এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাতিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.