গৌতম ব্রহ্ম: ছোঁয়াচ লাগার আতঙ্ক-চাদরে ঢাকা পড়ছে রক্তের সম্পর্কও! এবং এমনই সর্বগ্রাসী সে আতঙ্ক যে, করোনায় মৃত প্রিয়জনকে ‘শেষ দেখা’ও বাতিল! ছেলে দেখতে আসছেন না মৃত বাবাকে। মেয়ে মাকে। স্বামী স্ত্রীকে। কেউ আবার হোয়াটসঅ্যাপে ছবি দেখেই চোখের জলে সারছেন শেষ বিদায়ের পালা।
অথচ সুযোগ করে দিয়েছিল রাজ্য। নীল প্লাস্টিকের বদলে এখন স্বচ্ছ মরচুয়ারি ব্যাগে ভরা হচ্ছে করোনা আক্রান্তের শবদেহ। দেহের উপরের অংশ ট্রান্সপারেন্ট শিল্ড দিয়ে ঢাকা থাকছে। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ নিরাপদভাবেই ব্যাগবন্দি দেহ চাক্ষুষের পূর্ণ সুযোগ। তবু কেন এত অনীহা? সংক্রমণের ভয়কেই দুষছেন হাসপাতাল-কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, করোনা ধরা পড়েছে, সেরেও গিয়েছে, এমন অনেক জীবিতকেই ফেরত নিতে চাইছে না বাড়ির লোক। মরদেহের ক্ষেত্রে অনীহা তো বেশি হবেই।
উলটো ছবিও রয়েছে। কেউ কেউ কোয়ারেন্টাইন ভেঙেও হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন। সোমবার বাঙুরে চারটি দেহ রাখা হয়েছিল। আধঘণ্টা বরাদ্দ থাকলেও অনেকে ৫-৭ মিনিটেই হাসপাতাল ছেড়েছেন। একটি পরিবার বাড়তি সময়ও নিয়েছেন। ধর্মীয় রীতি মেনে দেহ প্রদক্ষিণ করেছেন, মন্ত্র পড়েছেন, ধূপকাঠি জ্বালিয়েছেন। আবার একটি পরিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নিজেদের অসহায়তার কথা। বলেছে, “হাসপাতালে এলে পাড়ার লোক আর ঢুকতে দেবে না।” ওই পরিবারকে হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠানো হয়েছে। বাঙুরের এক আধিকারিক বললেন, “অনেকে ই-মেলে ‘এনওসি’ দিয়েছেন।” টালিগঞ্জের এম আর বাঙুরের সুপার ডা. শিশির নস্কর বলছেন, “আমরা সবাইকে আসতে বলছি। নিয়ম মেনে মর্গের সামনে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা রাখছি। কিন্তু অনেকেই আসছেন না।”
একই অভিজ্ঞতা সল্টলেক আমরিরও। মরদেহ দেখা নিয়ে গাইডলাইন প্রকাশের পর আমরিতে তিন কোভিড আক্রান্তের মত্যু হয়েছে। এসেছিলেন দু’জনের বাড়ির লোক। করোনা সংক্রমিত হয় শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে। ‘কনট্যাক্ট স্প্রেড’ অত্যন্ত বিরল। নিথর শ্বাস-প্রশ্বাস শূন্য মৃতদেহ থেকে সংক্রমণের সব রাস্তাই যে অবরুদ্ধ। তবু কেন এত ছুঁৎমার্গ? এত ভয়?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.