অভিরূপ দাস: প্রথিতযশা চিকিৎসক। রোগীকুলের কাছে চাহিদা বিপুল। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা। কী উপায়ে মিলবে চটজলদি ডাক্তার দেখানোর সুযোগ? ঘরে বসে মাত্র দশ টাকাতেই বুক করুন। সামান্য সেই টাকা দিতে গেলেই অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করছে সাইবার ঠগ। অসুস্থ মানুষের উপায়হীনতার সুযোগ নিয়েই ফাঁদ পেতেছেন জালিয়াতরা। সম্প্রতি হাবড়ার অশোকনগরের সোমা দাশ চক্রবর্তীর অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৫ হাজার টাকা উধাও হয়েছে। যে বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর কাছে নাম লেখাতে গিয়ে টাকা উধাও হয়েছে, সব শুনে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ।
চার বছরের সন্তানের সর্দি-কাশি যাচ্ছে না। সোমা ঠিক করেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষকে দেখাবেন। কীভাবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হয় জানেন না। ডাক্তারের নাম গুগলে লিখে টাইপ করতেই ভেসে ওঠে পেজ। সোমার কথায়, এমনই একটি পেজে দেখি ডা. অপূর্ব ঘোষের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। তার জন্য মাত্র দশ টাকা দিয়ে বুকিং করতে হবে। টাকা দিতে হবে অনলাইনেই। লোভনীয় অফার ছাড়তে চাননি সোমা। রোগীর নাম বয়স ঠিকানা জাতীয় বিবরণ লেখার পরই টাকা দিতে বলে জালিয়াতরা। মাত্র ১০ টাকা দিতে গেলেও টাইপ করতে হবে ডেবিট কার্ডের ডিটেলস। তা দেওয়া মাত্রই ছোট্ট মেসেজ। ৪৫ হাজার টাকা উধাও সোমার অ্যাকাউন্ট থেকে।
অশোকনগর থানায় অভিযোগ করেছেন সোমা। জানিয়েছেন সাইবার ক্রাইম বিভাগে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ বলেন, “অনলাইনে আমার নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি চলছে। রোগীর পরিবারদের বলব অনলাইনে নাম লেখানো, টাকা আদান-প্রদান করতে যাবেন না।” তাঁর বক্তব্য, “প্রান্তিক এলাকা থেকে অগুনতি মানুষ আমার চেম্বারে আসেন। এমন অনেকেই আছেন যাঁদের হাতে কোনও স্মার্ট ফোন নেই। এঁদের কথা ভেবেই অনলাইনে নাম বুক করার কোনও ব্যবস্থা রাখিনি।” উল্লেখ্য, ওই ভদ্রমহিলা প্রথম নন, এর আগেও অনলাইনে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর কাছে অনলাইনে নাম লেখাতে গিয়ে টাকা খুইয়েছেন বহু মানুষ।
বহু প্রথিতযশা চিকিৎসকের চটজলদি অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ভুয়ো পেজ খুলেছে জালিয়াতরা। ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক লাহিড়ীর কথায়, “ইন্টারনেটে দেখেছি আমার ছবি ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দিয়েছে একাধিক সংস্থা। এদের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। অনলাইনে আমার ভিজিট দেওয়ারও বন্দোবস্ত রেখেছে জালিয়াতরা।”
জাস্ট ডায়ালের নামে এমন অগুনতি ফোন পেয়ে ক্ষুব্ধ সার্জন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারও। তাঁর কথায়, “কোনও অনলাইন পোর্টালের সঙ্গে আমার চুক্তি নেই। অথচ ব্যাঙের ছাতার মতো একগুচ্ছ পোর্টাল আমার নাম ব্যবহার করে ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। অজানা নম্বর থেকে রোগীরা ফোন করে বলেন, কাল আসছি।” তিতিবিরক্ত ডা. সরকার জানিয়েছেন, না বলে বলে তাঁর মুখ ব্যথা হয়ে গিয়েছে। করোনায় অনেকেই চেম্বারে আসতেন না। বহু চিকিৎসক সে সময় ভিডিও কলে রোগী দেখেছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, “সেই অনলাইনে সুযোগ নিয়ে এই ধরনের প্রতারণা শুরু করেছে জালিয়াতরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.