অভিরূপ দাস: দিন দশেক ধরে গা-হাত-পায়ে ব্যথা, জ্বর জ্বর ভাব। তবে কি করোনা ভাইরাস (Coronavirus) বাসা বাঁধল শরীরে? ডাক্তার দেখাতে একাধিকবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব লক্ষ্মী সাউ। ভরতি নেওয়া হয়নি। ১০ দিন পর সেই হাসপাতালেরই জরুরি বিভাগের সামনে মেঝেতে প্রাণহীন দেহ থেকে লালারস নিলেন চিকিৎসকরা। বাড়ির সদস্যরা একরাশ হতাশা নিয়ে বলছেন, “বেঁচে থাকতে মা চিকিৎসা পেল না। আর এখন চিকিৎসকরা মরা মায়ের করোনা টেস্ট করছেন!”
অভিযোগ, দিনের পর দিন তিনি হাসপাতালে এলেও চিকিৎসকরা দূর থেকেই বলে দেন, ভরতি হওয়ার দরকার নেই। ক্যালপল জাতীয় ওষুধ খেলেই সেরে যাবেন। সোমবার দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। সাইকেল ভ্যানে চাপিয়ে বৃদ্ধাকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়। স্টোথে লাগিয়েই চমকে যান চিকিৎসকরা। রোগী তো অনেকক্ষণ আগেই মারা গিয়েছে। উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মী সাউয়ের মেয়ে সুনিতা সাউয়ের অভিযোগ, চিকিৎসা না পেয়েই মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। ওই বৃদ্ধার দুই মেয়ে থাকেন ঠনঠনিয়া কালিবাড়ির এলাকায়। মেয়েদের কথায়, ”মেডিক্যাল কলেজ COVID হাসপাতাল হয়েছে শুনে মা আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। এখান থেকে মেডিক্যাল কলেজ কাছে। কিন্তু চিকিৎসা না পেয়েই চলে যেতে হল মাকে।” তবে মৃত্যুর পরও জট কাটেনি। বৃদ্ধার মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, ওনার করোনা উপসর্গ ছিল। তবে টেস্ট হয়নি কোথাও। লালারসের নমুনা নেওয়া হয়েছে। করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এলে সরকারি প্রোটোকল অনুযায়ী সৎকার করা হবে।
এর আগেও এ রাজ্যে এমন ঘটনা ঘটেছে। ইছাপুর এবং জয়নগরের দুই যুবককে এভাবেই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। ইছাপুরের যুবক করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। স্রেফ সময়মত চিকিৎসার অভাবেই তাঁকে অকালে চলে যেতে হল বলে অভিযোগে সরব পরিবার। এ বিষয়ে তাঁরা প্রশাসনের উচ্চস্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন। জয়নগরের যুবকেরও মৃত্যু হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যালেই। এনিয়ে গত কয়েকদিনে এভাবে বেশ কয়েকজনকে মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের এহেন চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.