সুব্রত বিশ্বাস: দূরপাল্লার ট্রেনে রিজার্ভেশন থাকলেও মিলছে না লোকাল ট্রেনে (Local Train) টিকিট। ফলে জেলার বিভিন্ন জায়াগা থেকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষত যাঁরা একটু দূরে থাকেন তাঁদের সমস্যা গুরুতর। সড়ক পথে পরিবহণের অভাবের জন্য যদিও বা কেউ লোকাল ধরে হাওড়া আসতে চান তারা টিকিট পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে লোকালে চড়ে হাওড়া এসে দিতে হচ্ছে জরিমানা। দশ টাকার জায়গায় খেসারত দিতে হচ্ছে ২৬০ টাকার।
সোমবার পৌনে তিনটে নাগাদ চন্দননগর থেকে এক দম্পতি হাওড়া স্টেশনে আসেন কামরূপ এক্সপ্রেস ধরতে। তাঁরা লোকালের টিকিট পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে বিনা টিকেটেই লোকাল ট্রেনে চড়তে হয় তাঁদের। তারপর হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে ২৬০ টাকা করে জরিমানা দিতে হয়। একইভাবে বিহার থেকে আসা পরিবারের লোকজনকে নিতে এদিন হাওড়া আসেন পোস্তা গণেশ টকিজ এলাকার বাসিন্দা রামজী যাদব। প্ল্যাটফর্ম টিকিট না পেয়ে তিনি প্ল্যাটফর্মে ঢুকে যান। সবার টিকিট থাকলেও তিনি বিনা টিকিটের যাত্রী হিসাবে ধরা পড়েন। ফলে জরিমানা দিতে হয় তাঁকে। চন্দননগরের ওই দম্পতি অমিত দাস ও তার স্ত্রীর অভিযোগ, রেলের অভিনব এই আয়ের পদ্ধতি ‘জরিমানা’। লোকালের টিকিট না দিলে দূরপাল্লার যাত্রীরা কিভাবে আসবেন হাওড়ায়? বাধ্য হয়ে লোকালে সওয়ার হয়ে জরিমানা দিতে হচ্ছে। রেলও জরিমানা থেকে একজনের কাছ থেকে ত্রিশ জনের ভাড়া আদায় করছে। পূর্ব রেলের এজিএম অনীত দুলাত স্পষ্ট বলেন, “টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে রাজ্যের বিধিনিষেধের জন্য। আমরা মানুষের সুবিধার জন্য হাওড়া, শিয়ালদহে স্টাফ স্পেশ্যাল বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন ট্রেন চলছে ৪৭৪টি।”
এদিন হাওড়া ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এই ধরণের ঘটনা নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ চরমে ওঠে। টিকিট পরীক্ষকদের ঘিরে মানুষজন ক্ষোভ দেখান। তাদের অভিযোগ, রেলের নির্দিষ্ট কোনও নীতি নেই। বারবার রাজ্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিজেদের আড়াল করছে। হাওড়া, শিয়ালদহে দুই রকম ব্যবস্থা কেন? শিয়ালদহে টিকিট দিলেও হাওড়ায় নয় কেন? এই সুযোগে মানুষের পকেটে কোপ পড়ছে। অভিযোগ, ভোরের দিকে এক শ্রেণির টিকিট পরীক্ষক ১২ থেকে ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে আরটিপিসিআর পরীক্ষা রিপোর্ট ও ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট চাইছেন। তা না থাকায় মোটা টাকা আদায়ের ভয় দেখিয়ে পরে ৫০০-৬০০ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। টিকিট পরীক্ষকদের একাংশের ক্ষোভ, নির্ধারিত নিয়ম নীতি নেই রেলের সিদ্ধান্তে। ফলে যাত্রীদের সঙ্গে সংঘাতে যেতে হচ্ছে তাঁদের। অবিলম্বে সঠিক পরিকল্পনা না নেওয়া হলে আগামী দিনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। হাওড়ার সিনিয়র ডিসিএম রাজীব রঞ্জন বলেন, “৩১ জুলাই পর্যন্ত সবাইকে টিকিট দিতে বলা হয়েছে। তারপরে এই পরিস্থিতি ঠিক নয়। কেন কোনও কোনও স্টেশনে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না, অতি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে তার খোঁজ নেওয়া হবে। আমাদের এখানে আরটিপিসিআর বা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক নয়, কোনও টিকিট পরীক্ষক তা দাবি করলে আইন বহির্ভূত কাজ। অভিযোগ পেলে চরমতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.