নব্যেন্দু হাজরা: কখনও তৃতীয় লাইনে আগুন। কখনও বা মেট্রোর চাকা থেকে আগুনের ফুলকি। গত দু’মাসে মেট্রোর লাইনে আগুন ধরেছে ১৮ বার। যা যাত্রীদের পাতালযাত্রাকে কার্যত আতঙ্কের করে তুলেছে। যাত্রীদের দাবি, মেট্রো কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষনের অভাবেই এই বেহাল অবস্থা শহরের লাইফলাইনের। কিন্তু আগুনের কারণ অনুসন্ধানে নেমে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। যা যাত্রীদের মধ্যে একেবারেই সুখকর নয়।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, ১৮ বারের মধ্যে ১৪ বারই আগুনের ফুলকি বেরিয়েছে চিপসের প্যাকেট, জলের বোতল, খাবারের প্যাকেট থেকে। শুনে কিছুটা অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
ব্যাগে করে চিপস, কেক, বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে অনেকেই মেট্রোয় চড়েন। তাঁরা মেট্রোয় বসে খান। রেক নন এসি থাকলে জানালা দিয়ে সেই প্যাকেট লাইনে ফেলে দেন। পরে ট্রেন সেই লাইন দিয়ে যাওয়ার সময় ওই প্লাস্টিকের জিনিসের সঙ্গে লাইন এবং চাকার ঘর্ষণে স্পার্ক হয়। যার ফলে বের হয় আগুনের ফুলকি, ধোঁয়া বের হয়। সেই সিগন্যাল মেট্রোর চালকের কাছে পৌঁছতেই তিনি ট্রেন থামিয়ে দেন। কিন্তু তার মধ্যে যা যা হওয়ার তা ঘটে যায়। আগুনের আতঙ্কে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি। ভিড়ের চাপে অসুস্থ হওয়া। তাঁদের উদ্ধার করে মেট্রো কর্মীদের নিয়ে আসা।
[ এখনই দল ছাড়ছেন না, জল্পনা ওড়ালেন অভিমানী শোভন ]
আর থার্ড রেলের পাওয়ারও বন্ধ করে দিতে হয় তখন কর্তৃপক্ষকে। ফলে পুরো পরিষেবা বন্ধ। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই প্লাস্টিক, জলের বোতল, খাবারের প্যাকেট লাইনে ফেলার ফলেই আগুনের ফুলকি বের হওয়ার ঘটনা ঘটে। যা একটু সচেতন হলেই বন্ধ করা যায়। তাঁদের বক্তব্য, থার্ড লাইনে বা চাকার কাছ থেকে স্পার্ক বের হওয়ার পর যখন মেট্রোর ইঞ্জিনয়াররা ঘটনাস্থলে যান, তখন অধিকাংশ সময়ই সেই এলাকা থেকে প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট পাওয়া যায়। তখনই বোঝা যায় ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া যে কোনও লাইনেই এয়ার গ্যাপ থাকার কারণে স্পার্ক হতে পারে। তা যেমন সাধারণ ট্রেন লাইনে হয়। তেমনই পাতালেও হয়। কিন্তু ময়দান স্টেশনে দুর্ঘটনার পর থেকেই পাতালপথের যাত্রীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আগুনের ফুলকি দেখলেই সকলে মনে করছেন, ওইদিনের মতো না আবার কিছু হয়। তাই চিৎকার করে ছোটাছুটি শুরু করে দেন তাঁরা। মেট্রোও বন্ধ করে দিতে হয়। আসলে আগেও এই ধরনের স্পার্ক বের হত। কিন্তু যাত্রীরাও গুরুত্ব দিতেন না। কারণ তাতে কিছু হয় না। দুর্ঘটনাও ঘটে না। কিন্তু ময়দানের ঘটনাই পুরো পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে।
তবে শুধু যে প্লাস্টিকের কারণেই এই আগুনের ফুলকি বের হয় তেমনটা নয়। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, যান্ত্রিক সমস্যাতেও হতে পারে। বার চারেক তো তাই হয়েছে। এক আধিকারিক জানান, আসলে এখানকার থার্ড রেল কারেন্ট কালেক্টর বা টিআরসিসি মান্ধাতা আমলের। তাই নয়া প্রযুক্তি বা নয়া রেকের সঙ্গে তা খাপ খাওয়াতে পারছে না। কিন্তু হঠাৎ করে তো সব বদলে ফেলা সম্ভব নয়। টিআরসিসির তো বয়স কম হল না। তাই সেখান থেকেও অনেক সময় পাওয়ার টানা যায় না। অনেক সময় ফুলকি বের হয়। এবার তাই টিআরসিসিতে অত্যাধুনিক ফিউজ লাগানো হচ্ছে। তবে সবথেকে বেশি জরুরি যাত্রীদের সচেতনতা। খাবারের প্যাকেট যেন তাঁরা কোনওভাবেই লাইনে না ফেলেন তা তাঁদেরই দেখতে হবে। সব রেক এসি হয়ে গেলে এই সমস্যা অবশ্য মিটবে। কারণ মূলত নন এসি রেকের জানালা দিয়েই চিপসের প্যাকেট বা জলের বোতল ফেলেন যাত্রীরা।
[ ‘বাংলার মানুষ ব্যালটে জবাব দেবে’, বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ মমতার ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.