দীপঙ্কর মণ্ডল: হাতে সময় একেবারেই নেই। পরিকল্পনা থেকে ১৮০ ডিগ্রি অবস্থান পরিবর্তন করে এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন করে সমস্ত সূচি ঠিক করতে হবে। অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ তেমনই। তাই আর দেরি করতে চান না রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। শিক্ষামহলের বিশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে সোমবারই এ বিষয়ে বৈঠকে বসতে পারেন তিনি।
শুক্রবার দেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সংক্রান্ত মামলায় দেশের শীর্ষ আদালত (Supreme Court) রায় দিয়েছে, স্নাতক-স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতেই হবে। তবে কোভিড পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়ার অনুকূল পরিবেশ নেই মনে করলে ৩০ সেপ্টেম্বরের পরেও পরীক্ষা নেওয়া যাবে। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার আছে রাজ্য সরকারে। এই রায়ের পর মামলার অন্যতম ‘পার্টি’ ওয়েবকুপার সভাপতি অধ্যাপক কৃষ্ণকলি বসু জানিয়েছেন, “UGC রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করেছিল। আমাদের মামলার রায়ে রাজ্যের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই রায়কে আমাদের আংশিক জয় বলা যেতে পারে।”
২৯ এপ্রিল এবং ৬ জুলাই দুটি পরস্পরবিরোধী বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)। প্রথমটিতে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন এই সংস্থার বক্তব্য ছিল, করোনা পরিস্থিতিতে স্নাতক-স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত বছরের পরীক্ষা না নিয়ে আগের হয়ে যাওয়া পরীক্ষার ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের পাশ করিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু পরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনলাইনে বা অফলাইনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্য UGC’র নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। রাজ্যের তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপা এই মামলার অন্যতম অংশীদার। সংগঠনের তরফে অধ্যাপক কৃষ্ণকলি বসু জানিয়েছেন, “রাজ্য সরকার চাইলে আমরা পরীক্ষা সংক্রান্ত পরামর্শ দেব। বিদেশে করোনা পরিস্থিতিতে ‘ওপেন বুক এক্সাম’ নেওয়া হচ্ছে। UGC’র কাছে আমাদের রাজ্য একই প্রস্তাব পাঠাতে পারে।”
সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্করের বক্তব্য, “চূড়ান্ত সেমিস্টার বা বর্ষের পরীক্ষা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিতেই হবে বা কোন কারণে পরবর্তীকালে গ্রহণ করতে গেলে UGC’র অনুমতি নিতে হবে, এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টের রায় আমাদের বিস্মিত করেছে। এপ্রিল মাসে UGC’র গাইডলাইন মেনে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে দিয়েছে, সেই পড়ুয়ারা অনিশ্চয়তায় পড়বেন।” সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ ভৌমিকের পরামর্শ, সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে সেন্ট্রাল অ্যাডভাইসরি বোর্ড অফ এডুকেশন (ক্যাবে)-এর ফোরামে জরুরি বৈঠক ডাকা হোক, যাতে এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী ও সব রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীরা পরিস্থিতি বিচার করে চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন করতে পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.