দীপঙ্কর মণ্ডল: দু’বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভোটের দরজা খুলতে চলেছে। আপাতত একক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে (যার অধীনে কোনও কলেজ নেই) দিয়ে প্রক্রিয়াটি ফের চালু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কলেজে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পালা শুরু হবে তারপরে।
২০১৮ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হয়নি। রাজ্যের শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক সেন্ট জেভিয়ার্সের আদলে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গড়ার কথা ভেবেছিল সরকার। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও এর সমর্থনে মতপ্রকাশ করেছিলেন। এদিকে পুরনো সংসদগুলির মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। দলমত নির্বিশেষে পড়ুয়া মহলেও নির্বাচনের দাবি জোরদার হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানেই ইঙ্গিত মেলে, ভোটের দরজা খুলতে চলেছে।
বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিনিধিরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ফের ছাত্রভোট করানোর দাবি তোলেন। পরে পার্থবাবু এ প্রসঙ্গে জানান, “রাজ্যের একক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে (যেগুলির অধীনে কোনও কলেজ নেই) আমরা ছাত্রভোট করানোর নির্দেশ দিচ্ছি। ভোটের দিন এবং নিয়ম ঠিক করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।” উচ্চশিক্ষা দপ্তর ঠিক করেছে আপাতত প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী এবং ডায়মন্ডহারবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে। ভোটের মাধ্যমে ইউনিয়ন না কি কাউন্সিল, কি গঠন হবে তা ঠিক করবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেমিস্টার পরীক্ষার কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চলতি বছরে ভোট করানো কঠিন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এই চার প্রতিষ্ঠানে ভোট হতে পারে।
অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-র রাজ্য সম্পাদক সপ্তর্ষী সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের দাবি লিংডো কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্যের সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভোট হোক। কিন্তু তৃণমূল সরকার নিজেদের শক্তি বুঝে নিতে মাত্র চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা আদতে অগণতান্ত্রিক। সাহস থাকলে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে ভোট করুক তৃণমূল সরকার। আমরা তৈরি।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর। তিনি জানিয়েছেন, “আমরা তৈরি। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলিতেও ভোট হবে। আমাদের সঙ্গেই পড়ুয়ারা আছেন। ছাত্র ভোটের কথা ঘোষণা করায় শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি সন্দীপ ঘোষ বলেন, “কেন শুধু চার জায়গায় ভোট হবে বুঝতে পারছি না। সব জায়গায় একসঙ্গে ছাত্রভোট হলে ভাল হত।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী কলা বিভাগ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথের বক্তব্য, “আমরা আড়াই বছর ধরে ছাত্র ভোটের দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু সরকার যা করল তা এককথায় আধা গণতন্ত্র। কেন সব জায়গায় ভোট হবে না। বোঝাই যাচ্ছে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
চলতি বছরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রভোট হবে বলে দলের ছাত্র সংগঠনকে কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন তৃণমূল মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী। তৃণমূল ভবনে দলের ছাত্রনেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। বেশ কয়েকদফা নির্দেশ দিয়েছিলেন পার্থবাবু। নিজের দলের ছাত্রনেতাদের তিনি রাজনৈতিকভাবে লড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিরোধী সংগঠনগুলিও যাতে ছাত্র ভোটে অংশ নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে বলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.