অর্ণব আইচ: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের দায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘাড়েই ঠেললেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। গ্রেপ্তারির প্রায় ন’মাসেরও বেশি সময় পর আদালতে সশরীরে হাজিরা দেন পার্থ ‘ঘনিষ্ঠ’। আদালতে তাঁর উপস্থিতি বিস্ফোরক দাবি করেন আইনজীবী। বলেন, নিয়োগ দুর্নীতির কিংপিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না অর্পিতা। এই যুক্তিতে জামিনের আরজি জানান আইনজীবী। যদিও ইডি তার তীব্র বিরোধিতা করে।
অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী আদালতে জানান, “মাস্টারমাইন্ড কে সেটা আসলে দেখতে হবে। অর্পিতা পরিস্থিতির শিকার। অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাটে সোনা ও নগদ টাকা পাওয়া গিয়েছে। তদন্তে অসহযোগিতা করছে বলা হচ্ছে। এভাবে কী ব্যক্তি স্বাধীনতাকে নষ্ট করা হচ্ছে না? ২০২২ সালের ২৩ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়েছে অর্পিতাকে। যা অভিযোগ আনা হয়েছে তা পুরোটাই ভিত্তিহীন। গ্রেপ্তারির আগে তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়নি। তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। অনন্ত টেক্স ফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড একটা রেজিস্টার অফিস। তার সঙ্গে সম্পর্ক কী? এই সংস্থার কর্মচারী মনোজ জৈনকে এখনও গ্রেপ্তার করা হল না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মনোজ জৈন এবং কমল সিং ভুতোরিয়াকে বলেছিলেন দু’জন ভুয়ো ডিরেক্টরকে আনতে। সেই অনুযায়ী গণেশ, মৃন্ময় মালাকার নামে দু’জন ভুয়ো ডিরেক্টরকে নিয়ে আসেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর মেয়ে সোহিনী, জামাই পুরো সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই সংস্থার সম্পূর্ণ সুযোগসুবিধা পেতেন পার্থ ও তাঁর পরিবার। অর্পিতা মুখোপাধ্যায় কোনওভাবে এই কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজের মাথা খাটিয়ে সবাইকে কাজ করাতেন। পুরো গেম প্ল্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।” অর্পিতার আইনজীবীর আরও দাবি, তাঁর মক্কেলের নামে রয়েছে মোটে তিনটি সম্পত্তি।
অর্পিতার জামিনের বিরোধিতায় সরব ইডি’র আইনজীবী। তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় মাস্টারমাইন্ড। এবং অর্পিতা ভিকটিম। কিন্তু ঘটনা হল পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজা ছিলেন। এবং অর্পিতা ডিফ্যাক্টো রানি। এখন এটা অর্পিতা প্রমাণ করুন পার্থ তাঁর কাকু ছিলেন নাকি তিনি তাঁর ডিফ্যাক্টো রানি। কারণ, পার্থর ৩১টি এলআইসি পলিসির নমিনি ছিলেন অর্পিতা। প্রত্যেকটাতে সই করেছিলেন অর্পিতা। বলা হচ্ছে পার্থর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তবে ‘আঙ্কল’ বলে উল্লেখ কেন? কলকাতায় এখন দু’টো কাকু আছে। একজন কালীঘাটের। আর একজন পার্থ। দু’জনে একসঙ্গে জমি কিনেছিলেন। পার্থ বলছেন আমার টাকা নয়। অর্পিতা বলছেন পার্থর টাকা। কার টাকা? দায় ওঁকে নিতে হবে। কারণ, তাঁর বাড়ি থেকে টাকাগয়না পাওয়া গিয়েছে। শুধু মহিলা বলে কী জামিন পেয়ে যাবেন? যদি তাঁর ভূমিকা না থাকে তাহলে ফ্ল্যাটের চাবি কাউকে টাকা রাখার জন্য দেব না। জেনে শুনে যাবতীয় ভূমিকা নিয়েছেন। এটা নয় যে তিনি আমাদের সাহায্য করেছেন। আমরা তদন্ত করে জানতে পেরেছি। ২০টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। তাতেই টাকা উদ্ধার হয়। অর্পিতাও সমানভাবে দায়ী এই কাণ্ডে। বলছি না যে তিনি চাকরি দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি সুবিধাভোগ করেছেন। এবং তিনি দায় এড়াতে পারেন না।”
আদালতে ফিরোজ এডুলজি বলেন, “WB18R550 এই গাড়ির নম্বরটা নোট করুন। এই গাড়িতে আইনজীবী আদালতে এসেছেন। গাড়িতে কেন্দ্রীয় সরকারি বোর্ড রয়েছে। আইনজীবীর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা অভিযুক্তই করে দিয়েছেন। তার থেকে স্পষ্ট এই অভিযুক্ত কতটা ক্ষমতাবান। যখন তিনি এমন জীবনযাপন করবেন সেটার ভুক্তভোগীও হতে হবে। সেটা হল জেল হেফাজত।” আগামী বুধবার জামিন মামলার রায় দেবে আদালত।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.