স্টাফ রিপোর্টার: লাগাতার জেরায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, উদ্ধার হওয়া টাকা তাঁর নয়, সব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানেন। বুধবার প্রেসিডেন্সি জেলে ইডি (ED)তদন্তকারীদের প্রশ্নের মুখে পড়ে পার্থ বললেন, টাকা তাঁর নয়, অর্পিতার বাড়ি, তিনিই বলতে পারবেন। বেলা ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ইডির তিন অফিসার পার্থকে জেরা করেন। ইডির দাবি, তিনি তদন্তে অসহযোগিতা করছেন। এদিন ইডি যাওয়ার পর পার্থর আইনজীবীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। নিজের অ্যারেস্ট মেমোয় মুখ্যমন্ত্রীর নাম থাকার বিষয়টি পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনি দিতে চাননি। বরং আগে নাম লেখা হয়েছিল বলেই তিনি সই করেননি। বস্তুত গ্রেপ্তারির পর দায় অস্বীকার করার জন্য পার্থ যা যা বলেননি, এখন সেগুলিই তাঁর মুখে শোনা যাচ্ছে। আর সেসব যথেষ্ট চমকপ্রদ। আজ, বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের হাজিরা ব্যাঙ্কশাল কোর্টে।
জানা গিয়েছে, ইডি মূলত টাকার উৎস, কিছু যৌথ সম্পত্তি, মেয়ে জামাইয়ের তহবিল এবং একটি ট্রাস্ট নিয়ে পার্থবাবুকে প্রশ্ন করেছে। পার্থ কখনও বলেছেন “জানি না”, কখনও বলেছেন “আগেই তো বলেছি।” বয়ানে অসংগতির কথা বলেছে ইডি। তাঁদের সন্দেহ, এই বিপুল টাকা স্রেফ চাকরি ‘বিক্রি’র নয়। এর বড় অংশ গত ক’মাস আগে বিকল্প সূত্রে আসা, যেখানে পার্থর দু-তিনজন ঘনিষ্ঠ জড়িত। এই নোটগুলি দীর্ঘদিনের মজুত নয়।
এসএসসি (SSC Scam) নিয়োগকাণ্ডের টাকা যদি এসেও থাকে, আগেই সম্পত্তি কিনতে ব্যবহার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, পার্থবাবু এদিন বারবার বলেছেন, “যার বাড়ি সে জানে।” তবে যৌথ সম্পত্তি ও ট্রাস্টের তহবিল নিয়ে প্রশ্নে পার্থ স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। ইডি অফিসাররা বয়ানের অসঙ্গতি ধরতে একই প্রশ্ন করেন একাধিকবার। একবার বিরক্ত হয়ে পার্থ বলেন, “এক কথা কতবার বলব?” ইডির এক অফিসার বলেন, “অন্য অভিযুক্তের সঙ্গে আপনার কথা তো মিলছে না।” পার্থ থমকে যান। ইডি সূত্রে খবর, তাঁরা পার্থ এবং অর্পিতা সূত্রে বহু তথ্য পেয়েছেন। ‘অপা’ বাড়ির নামের প্রসঙ্গ তুলতেই পার্থ বলেন, “অর্পিতাকে আপনারা বেশি উত্ত্যক্ত করবেন না।” ইডি বলে, ”আপনিই তো বলছেন, টাকা অর্পিতার। ফলে ওঁকে তো প্রশ্ন করতেই হবে। পার্থ বলেন, “আমাকে আরেকটু ভাবার সময় দিন।” এরপর ট্রাস্ট আর মেয়ে জামাইকে নিয়ে প্রশ্ন। মোটামুটি এখানেই এদিন জেরাপর্ব শেষ হয়। আজ আদালতে তোলা হবে পার্থ এবং অর্পিতাকে। সন্ধেয় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় আলোচ্য বিষয় ছিল, আদালতে রণকৌশল। পার্থর জামিনের আবেদন করা হবে কি না, রাত পর্যন্ত তা চূড়ান্ত হয়নি।
তবে একটি রুটিনমাফিক আবেদন হতে পারে, যাতে নাকচ হলেও উচ্চতর আদালতে যাওয়ার পথ খোলা থাকে। কোর্টের নির্দেশে ১ সেপ্টেম্বর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দেহরক্ষী বিশ্বম্ভর মণ্ডলের পরিবারের দশজনকে জেরা করবে সিবিআই। এঁরাই অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছে বলে অভিযোগ। এঁদেরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ডাকা হয়। কিন্তু তাঁদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হওয়ায় বিচারপতি সিবিআইকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.