গৌতম ব্রহ্ম: নোবেলের আলোয় ফের ঝলমলিয়ে উঠেছে কলকাতা। বিশ্বমঞ্চে বাঙালির কৃতিত্বের ছটায় আলোকিত তামাম মহানগর। সাউথ পয়েন্ট থেকে প্রেসিডেন্সি। মহানির্বাণ মঠ রোড থেকে সপ্তপর্ণী আবাসন। সর্বত্রই অধ্যাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্যের উদযাপন। তালিকায় নতুন সংযোজন দক্ষিণ শহরতলির বাঘাযতীনে ফুলবাগান মেলার মাঠ। কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের এই মাঠের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে সুইডেনের স্টকহোম। নোবেল জয়কে স্মরণীয় করে রাখতে এই মাঠের নামকরণ হয়েছে ‘অভিজিৎ বিনায়ক শিশু উদ্যান।’
ডিসেম্বরের শেষে যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা এই উদ্যানের। নোবেলজয়ের পর দেশে এলেও নিজের বই উদ্বোধন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও নীতি আয়োগের সঙ্গে বৈঠক ছাড়া কোনও অনুষ্ঠানে অংশ নেননি অভিজিৎ বিনায়ক। কলকাতায় এসে শুধু দেখা করেছিলেন নবনীতা দেবসেনের সঙ্গে। এর বাইরে কর্মসূচি বলতে মোহনবাগানের আজীবন সদস্যপদ গ্রহণ। সময়ের অভাবে কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। কিন্তু তাঁর নোবেলজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে কলকাতায় চিলড্রেন পার্ক হচ্ছে জেনে যারপরনাই খুশি ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোর্ড ফাউন্ডেশন অধ্যাপক। কিছুটা আবেগতাড়িতও বটে। বললেন, “শৈশবের একটা প্রধান উপকরণ খেলার জায়গা। সবুজের সান্নিধ্য। আমি দু’টি শিশুর বাবা হয়ে বলছি, এই ছোট জায়গাটা থাকুক উজ্জীবিত হয়ে।”
বিনায়কের শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে আনন্দের জোয়ারে ভেসেছেন ফুলবাগানের বাসিন্দারা। বেজায় খুশি স্থানীয় কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। নোবেলজয়ীর নামে পার্কের নামকরণের পরিকল্পনা তাঁরই। পরিচালনা করবে ফুলবাগান সংস্কৃতি ক্লাব। শুধু অভিজিৎ বিনায়ক নন, ওয়ার্ডে আর একটি নির্মীয়মাণ পার্কের নামকরণ হয়েছে অর্থনীতির আর এক নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের নামে। বাপ্পাদিত্য জানালেন, “জগৎসভায় বাঙালিকে ফের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছেন অভিজিৎ বিনায়ক। বাঙালি তাঁর চোখ দিয়ে আবার স্বপ্ন দেখছে জগৎসেরা হওয়ার। এমন মানুষের নামে পার্ক উৎসর্গ করতে পেরে আমরা ধন্য। অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের নামেও পার্ক হচ্ছে।”
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারির শেষে কলকাতায় আসবেন অভিজিৎ বিনায়ক। তখন তাঁর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ‘ডিএসসি’ গ্রহণ করার কথা। আর ওই সময়ই নিজ নামাঙ্কিত শিশু উদ্যানে নোবেলজয়ীর পদার্পণ ঘটতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
বুধবার দিনভর ফুলবাগান জুড়ে চলল নোবেলচর্চা। এই মাঠে এখনও পয়লা বৈশাখে মেলা হয়। সকাল-সন্ধ্যায় কচিকাঁচাদের কলরবে মুখর হয় মাঠ। মাঠের উল্টোদিকেই সংস্কার হওয়া পুকুর। মাঠের গা-ঘেঁষে ওয়ার্ড অফিস। মনোরম পরিবেশ। শিশু উদ্যানের উপযুক্ত পরিবেশ। বাপ্পাদিত্য জানালেন, “পার্কে অভিজিৎ বিনায়কের হরেক ছবি তো থাকছেই। থাকছে নোবেলের মঞ্চে তাঁর ধুতি পরা ছবি। থাকছে শুভেচ্ছাবার্তা। অভিজিৎ বিনায়ক ও সহ-নোবেলপ্রাপক ও স্ত্রী এস্থার ডাফলোর লেখা ও সম্পাদিত ‘পুওর ইকনমিক্স’ ও ‘গুড ইকনমিক্স ফর হার্ড টাইমস’-এর প্রচ্ছদও। আর অবশ্যই থাকবে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। নোবেল জয়ের স্বপ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.