নব্যেন্দু হাজরা: ‘নৃত্য আমার মন, নৃত্য আমার প্রাণ। নৃত্য নিয়েই বাঁচতে চাই, নৃত্য আমার সম্মান।’ ফেসবুকের এমন ইন্ট্রোর সঙ্গে অবশ্য বাস্তবের খুব একটা এখন মিল নেই। কারণ কারমেলের একরত্তিকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে এই প্রোফাইলের অধিকারীর আস্তানা এখন শ্রীঘর। সৌমেন রানা। মাস কয়েক হল নাচের শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন কারমেল প্রাইমারি স্কুলে। তাঁর বিরুদ্ধে উঠে এল ক্লাস টু-এর ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ। যে ঘটনা ঘিরে দিনভর উত্তাল হয়ে রইল শহর। আর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ওই স্কুলের অনেক ছাত্রীই এখন অভিযোগের আঙুলে বিদ্ধ করছে এই ‘নৃত্যশিল্পীকে’। শুক্রবার রাতেই স্কুলের গেটে পড়ল ধিক্কার পোস্টার। তবে পুলিশ কিন্তু আগাম সতর্ক রয়েছে। নতুন করে কোনও উত্তেজনা ছড়াক, চাইছে না প্রশাসনও।
আজ সকাল থেকেই স্কুলে জড়ো হয়েছেন অভিভাবকদের একাংশ। এদিনই অভিভাবক-শিক্ষক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বৈঠকে সিসিটিভির প্রসঙ্গ উঠতে পারে। স্কুলে নাচের স্যারের আচরণ নিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে একটা কিন্তু কিন্তু ভাব ছিলই। অভিভাবকদের দাবি, তাঁদের মেয়েরা বাড়ি গিয়ে বলত, ‘নাচের স্যর কেমন একটা!’ তবে কেউ সেই অর্থে অভিযোগ জানাননি। কারণ, তিনি একজন শিক্ষক। আদি বাড়ি মেদিনীপুর। কত্থক এবং ক্রিয়েটিভ ডান্সার হিসাবে তাঁর নামডাক হলেও তিনি মেক-আপ একজন আর্টিস্টও বটে। সেই সঙ্গে ভাল ফটোগ্রাফার। বাইরে থেকে তাঁর গুণের পরিধি দেখে বোঝার উপায় নেই এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন সৌমেন। অন্তত তেমনটাই বলছেন তাঁর পরিচিতরা। যাঁরা তাঁর সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন বা তাঁর হাতের ছোঁয়ায় সেজেছেন। ঘটনার কথা রটতেই এই শিক্ষকের প্রোফাইলে চলছে নিন্দার ঝড়। আর তাঁর ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বন্ধু-বান্ধবরা! ‘স্পিকটি নট’। হাসিখুশি স্বভাবের এই শিক্ষকের ধ্যান-জ্ঞান সবকিছুই ছিল নাচ। তবে বিভিন্ন নাটকেও অভিনয় করতেন তিনি। মূলত মহিলা চরিত্রে। কারমেল স্কুলের নাচের শিক্ষক গতবছর অবসর নেন। তার পরই চুক্তির ভিত্তিতে ভাল প্রোফাইলের এই শিক্ষককে আনা হয়।
তখন থেকেই স্কুলের ছোট ছোট শিশুদের নাচ শেখাতেন তিনি। সবার সাঙ্গেই মিশতেন। অবশ্য তাঁর বিষয়ে এখন আর মুখ খুলতে রাজি নন স্কুলের অন্য শিক্ষিকারা। বিভিন্ন নাচের অনুষ্ঠান এমনকী নাটকের মঞ্চে অভিনয় করার ছবি অভিযুক্তর ফেসবুক প্রোফাইল জুড়ে। বিয়ে হয়নি এখনও। মেদিনীপুরের অমর্ষি আর এন হাইস্কুলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা। তারপর কলকাতায় এসে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাচে ডিগ্রি। সেখান থেকেই কেরিয়ার শুরু। নাচ এবং নাটকের দলে কাজ করতেন তিনি। সঙ্গে অতিরিক্ত গুণও ছিল। ভাল চুল এবং মেক-আপ আর্টিস্ট হিসাবে নাম হয়েছিল তাঁর। কারমেল স্কুলেই যে তিনি প্রথম শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন তেমনটা নয়। তার আগে শ্রীরামকৃষ্ণ সারদামণি আশ্রম বিদ্যাপীঠ নাচের শিক্ষক এবং গীতাঞ্জলি সংস্কৃতি মঞ্চে কোরিওগ্রাফার ছিলেন। স্কুলের অভিভাবকদের দাবি, কিছুটা মেয়েলি স্বভাবের এই শিক্ষক যে এমনটা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন, তা তাঁরা কল্পনাও করতে পারছেন না। তবে তাঁরা এখন চাইছেন এই শিক্ষকের চরম শাস্তি। যাতে আর কেউ এমন কাজ করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে না পারেন। আপাতত, মেয়েদের স্কুলে কোনও পুরুষ শিক্ষক রাখা যাবে না, এই দাবিতে অনড় অভিভাবকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.