সুদীপ রায়চৌধুরী: ভোটের দিনই ১৫ জনের মৃত্যু! আহতের সংখ্যার ইয়ত্তা নেই। কমিশনে জমা পড়েছে হাজারের বেশি অভিযোগ। আরও এক অগ্নিগর্ভ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সাক্ষী থাকল বাংলা। না রাজ্যের শাসকদল, না কোনও বিরোধী দল, না নির্বাচন কমিশন, আর না কেন্দ্রীয় বাহিনী। আশ্চর্যজনকভাবে এই ১৫টি মৃত্যু, এই বেলাগাম হিংসার দায় কোনওপক্ষই নিতে চাইছে না।
রাজ্যের নির্বাচনী হিংসায় এবার যেমন বিরোধীরা আক্রান্ত হয়েছে, তেমনি রেহাই পায়নি শাসকদলও। এ পর্যন্ত তৃণমূলেরই সাত কর্মীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। দিনের একেবারে শুরু থেকে শাসকদল সরাসরি নিশানা করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তৃণমূলের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একাধিকবার টুইট করে অভিযোগ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিস্ক্রিয়। কোথাও আবার বাহিনী সরাসরি বিজেপির হয়ে ভোট করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে শুধু যে শাসক শিবির ক্ষুব্ধ, তাই নয়। বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরাও। খোদ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলছেন বাহিনীর ব্যবস্থাপনা এবং ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএসএফের আইজি এসসি বুদাকোডিকে চিঠি লিখেছেন।
বস্তুত, এদিন সকাল থেকে দুষ্কৃতীরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে তাণ্ডব চালিয়ে গিয়েছে, তাতে বাহিনী আদৌ কতটা কার্যকর ছিল, সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হিংসার দায় নিয়ে নারাজ বাহিনীও। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দায়িত্বে থাকা নোডাল অফিসার তথা বিএসএফের আইজি পালটা কমিশনকে বিঁধেছেন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে চিঠি লিখে তাঁর তোপ,”বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক নয়। যেসব জায়গায় হিংসা হয়েছে, সেসব জায়গায় বাহিনী ছিল না।” অর্থাৎ তাঁর ইশারা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দিকে।
বিরোধীরাও একযোগে বিঁধেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনারও দায় নিতে নারাজ। তাঁর সাফ কথা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব রাজ্যের। কমিশনের নয়। রাজীব সিনহা সাফ বলছেন,”আমার দায়িত্ব ছিল বাহিনীর ব্যবস্থাপনা করা। আমি আমার মতো ব্যবস্থাপনা করে দিয়েছি। এবার কে কাকে গুলি করবে, কে কাকে মেরে দেবে। সেটা দেখা পুলিশের কাজ। পুলিশ তদন্ত করবে, গ্রেপ্তার করবে।” অর্থাৎ রাজীব সিনহা বলে দিচ্ছেন, তিনি শুধু ব্যবস্থাপনা করেই খালাস। হিংসার দায় তাঁরও নয়! প্রশ্ন হল, তাহলে এই মৃত্যুমিছিলের দায় কার? কেউ হাত তুলবেন কি?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.