স্টাফ রিপোর্টার: মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করার অভিযোগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তদন্ত করে ব্যবস্থা দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। অভিযোগ, মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে সিপিএমের দুই প্রার্থীর উপর চাপ দেওয়া হয়। এই অভিযোগই রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালত জানিয়েছে, কমিশনকে মামলাকারীদের অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এর জন্য কমিশনকে একটি দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এনিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে হবে আদালতে। এদিকে, পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই কলকাতা হাই কোর্টে বাড়ছে মামলার বহর। মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত মামলাগুলো একসঙ্গে করে ‘ইলেকশন পিটিশন’ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
আইনজীবী সামিম আহমেদ জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের কালীনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেন শ্যামল মণ্ডল এবং রেশমা অঙ্কুজি। তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে প্রত্যাহারের জন্যে। অন্যদিকে, হাওড়ার জয়পুর থানা এলাকায় কংগ্রেস প্রার্থী সুকুমার মিদ্দাকে জোর করে মনোনয়ন তোলানোর পর থেকে তিনি নিখোঁজ বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার মামলায় দাবি করা হয়, এই মামলা দায়েরের পর সোমবার রাতে মামলাকারীর আইনজীবীকে একটি ভিডিও দেখায় পুলিশ। সেখানে মিদ্দা একজন পুলিশের সামনে বলছেন, আমি গোপন জায়গায় আছি। গোলমাল মিটলে বাড়ি যাব। তা শুনে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দিয়েছেন, এই ভিডিওর প্রেক্ষিতে পুলিশকে এফআইআর করতে হবে। তাঁকে এই বক্তব্য জোর করে বলানো হয়েছে, নাকি তিনি স্বেচ্ছায় বলেছেন, সেটা পুলিশকে জানতে হবে। তাঁকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই নিয়ে আগামী ১৯ জুলাই পুলিশ আদালতে রিপোর্ট দেবে।
পাশাপাশি, শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্ত জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ দিল আদালত। তিনি প্রচারের জন্য আসানসোল দিয়ে যাতায়াত করে পাণ্ডবেশ্বর যেতে পারবেন। তবে, আসানসোলে থাকতে বা আসানসোলে কোনওরকম কাজ করতে পারবেন না এই বিজেপি নেতা। এদিন জিতেন্দ্রর আবেদনের ভিত্তিতে এই নির্দেশ দিল বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ ও বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। আসানসোলে কম্বল বিতরণে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে কলকাতা হাই কোর্ট তাঁকে শর্তসাপেক্ষ জামিন দেয়। নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর আসানসোলে ঢোকার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন জানান জিতেন্দ্র তিওয়ারি। সেই আবেদনের পরেই আদালতের এই নির্দেশ।
এছাড়াও, নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে গোটা রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে ‘সেভ ডেমোক্রেসি’ নামে একটি সংগঠন। তাদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দাবি, “নির্বাচন কমিশন এখনও নির্বাচন পরিচালনায় প্রস্তুত নয়। তারা নিজেদের স্বাধীন সংস্থা বলে দাবি করলেও, রাজ্যের উপর নির্ভরশীল।” অভিযোগ, যেখানে রাজ্যে বিরোধী শিবিরের বহু প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারেননি, সেখানে আরবে বসে মিনাখাঁর এক তৃণমূল প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। এছাড়াও, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমার পরেও তৃণমূল ৭ লক্ষের বেশি মনোনয়ন দিয়েছে বলে অভিযোগ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপস্থিত না থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে দাবি বিকাশের। রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলেও দাবি তাঁর। বুধবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.