রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: জাতপাতের অঙ্ক কাজে লাগল না! দুর্নীতির অভিযোগ কাজে লাগল না, হিংসার অভিযোগেও ডাল গলল না। লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha) ছ’মাস আগে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবি বিজেপির অন্দরে বহু প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল।
উত্তরবঙ্গের কামতাপুরি থেকে রাজবংশী ভোট, কিংবা আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে চা বাগান অধ্যুষিত আদিবাসী অঞ্চল, আবার গোটা জঙ্গলমহলে আদিবাসী ভোট ব্যাংক, কুর্মি ভোটও সেভাবে আসেনি। সর্বত্রই ধাক্কা বিজেপির। আবার গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে সিংহভাগ মতুয়া ভোটে আধিপত্য খর্ব হয়েছে পঞ্চায়েত ভোটে। এককথায়, জাতপাতের রাজনীতি করতে গিয়ে বাংলায় মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। আগের থেকে অনেক কমে গেল ভোট। প্রাথমিক হিসাবে বিজেপি পঞ্চায়েত ভোটে দ্বিতীয় দল হলেও ২০২১ বিধানসভা থেকে ভোট কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত দলের হিসাবে ২২ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছে এবার বিজেপি (BJP)। ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে ৪ শতাংশ ভোট বেড়েছে। ২০১৮-র পর বিজেপি ১৮ জন সাংসদ পেয়েছে, ৭৭ জন বিধায়ক পেয়েছে। যে গতিতে বিজেপি এগোনোর কথা ছিল এবারের পঞ্চায়েত নিবাচনে তা কিছুটা আঘাত পেলো। স্বাভাবিকভাবে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, কেন ১৫ শতাংশ ভোট কমেছে?
লোকসভা নির্বাচনের বাকি মাত্র কয়েকটা মাস। তার আগে বিজেপিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহল। উত্তর থেকে সাতটি ও জঙ্গলমহল থেকে পাঁচটি, মোট ১২টি আসন গত লোকসভা ভোটে পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। একুশের বিধানসভা ভোটে ধাক্কা খেলেও গড় পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। কিন্তু পঞ্চায়েতের ফল প্রকাশ হতেই দেখা গেল ভরাডুবি দশা। যা মুহুর্তে পৌঁছে গিয়েছে দিল্লির দরবারেও। প্রমাদ গুণছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও (JP Nadda)। সূত্রের খবর, কেন এই বিপর্যয় তা নিয়ে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে দিল্লির তরফে। অন্যদিকে, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘‘গত লোকসভা ভোটের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না। গত আঠারোর পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের আসন বেশি রয়েছে। আমরা আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার-সহ কয়েকটি জেলা পরিষদ আসন পেতাম। কিন্তু আলিপুরদুয়ারে গণনাকেন্দ্রে তাণ্ডব চালাচ্ছে তৃণমূল।’’
কয়েকটি বুথে সন্ত্রাস হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল রাজ্য বিজেপি নেতারা। মোট ৬১,৬৩৬টি বুথের মধ্যে গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটেছিল খুবই কম সংখ্যক বুথে। কিন্তু অধিকাংশ যেসব বুথেই ভাল ভোট হয়েছে সেখানেও ফল খারাপ হয়েছে বিজেপির। আর তা নিয়েই এবার প্রশ্ন উঠে গেল দলের মধ্যেই। পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election 2023) উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলে ফল ভাল না হওয়াটা চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির কাছে অশনিসংকেত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, বুথস্তরে আমাদের সংগঠন যে কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলই তার প্রমাণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.