ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: একযুগ পর সাজা পাকিস্তানি জঙ্গির। পাকিস্তানের আল বদর জঙ্গি সংগঠনের উপরতলার পদ ছিল তার দখলে। পাকিস্তানে বিশেষ জঙ্গি প্রশিক্ষণ ছিল তার। অস্ত্র চালাতে ও বিস্ফোরক তৈরিতে সিদ্ধহস্ত ছিল সে। ২০০৯ সালে শাহবাজ ইসমাইল নামে ওই জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। গ্রেপ্তারির বারো বছর পর সোমবার তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দিল আদালত।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের ১৯ মার্চ এসটিএফ শাহবাজ ইসমাইল নামে পাক জঙ্গি সংগঠন আল বদরের সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। ফেয়ারলি প্লেস থেকে জম্মুর টিকিট কাটার সময় এসটিএফ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে ভুয়ো পরিচয়পত্র উদ্ধার হয়। নিজেকে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির মহম্মদ জামাল নামে পরিচয় দিয়েছিল সে। তার কাছ থেকে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভুয়া ভোটার পরিচয়পত্র, বাংলাদেশি সিমকার্ড ভরা মোবাইল, কিছু বিস্ফোরক ও একটি পকেট ডায়েরি উদ্ধার হয়। সেই পকেট ডায়েরিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির ফোননম্বর ভরতি। এ ছাড়াও ছিল বিস্ফোরক কীভাবে তৈরি করতে হয়, সেই সংক্রান্ত কিছু নোট। তাকে গ্রেপ্তার করে হেয়ার স্ট্রিট থানায় মামলা দায়ের হয়। তার ও তার অজ্ঞাতপরিচয় সঙ্গীদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা, মিথ্যা পরিচয়, জালিয়াতি, ষড়যন্ত্র ও ১৪এ বিদেশি আইনে মামলা শুরু করেন এসিটএফের তৎকালীন অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার অসিতবরণ শীল। তদন্ত শুরু করেন এসটিএফ আধিকারিক সুশান্ত ধর। তার কাছ থেকে যে বস্তুটি উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটি যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও পেট্রোলিয়াম হাইড্রোকার্বনের মিশ্রন, ফরেনসিক রিপোর্টে তার প্রমাণ মেলে। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনের ধারা যোগ হয়। ৯০ দিনের ভিতর চার্জশিট পেশ করে এসটিএফ।
তদন্তে জানা যায়, শাহবাজ ইসমাইল আসলে পাকিস্তান রেঞ্জারের এক হাবিলদার। তার আসল বাড়ি পাকিস্তানের দেরা গাজি জেলার সুমালি মহল্লা গ্রামে। পাক অধিগৃহীত কাশ্মীরের মুজফ্ফরনগরের জঙ্গি ক্যাম্পে সে প্রশিক্ষণ নেয় হরকত উল মুজাহিদিন সংগঠনের কাছে। সেখানেই আল বদরের শীর্ষনেতা ইউসুফ বালুচের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। আটমাকানের পাহাড়ি এলাকায় তাকে এ কে ৪৭, পিস্তল, রকেট লঞ্চার চালানো, হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়া, বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের পর আল বদর তাকে কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। সফল না হওয়ায় রাওয়ালপিন্ডির আল বদরের অফিসে যায়। তাকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশের ভিসা দেওয়া হয়। করাচি থেকে ঢাকায় পৌঁছয় সে। ঢাকা থেকে আল বদরের মুস্তাফা তাকে রাজশাহীতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মুর্শিদাবাদে অনুপ্রবেশ করে। লালগোলা প্যাসেঞ্জারে করে বহরমপুর থেকে পৌঁছয় শিয়ালদহ স্টেশনে। সেখান থেকে ফেয়ারলি প্লেসে গিয়ে টিকিট কাটতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় পুলিশের হাতে।
শুনানির শেষে বিচার ভবনের সিটি সেশনস কোর্টের ফাস্ট ট্র্যাক ফাস্ট কোর্টের অতিরিক্ত জেলা ও সেশনস বিচারক সৌগত রায়চৌধুরি শাহবাজকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এদিন তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলার সরকারি আইনজীবী ছিলেন গণেশ মাইতি ও বিশ্বজিৎ দে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.