শুভঙ্কর বসু: করোনা ভাইরাসের আবহে দেশজুড়ে জেলগুলির ভার কমাতে জামিনে বন্দিমুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবার কলকাতা হাই কোর্টে জামিনের আবেদন নিয়ে হাজির এক আইএসআই এজেন্ট। যদিও পত্রপাঠ সেই আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি বিবেক চৌধুরির ডিভিশন বেঞ্চে জামিনের আবেদন জানায় পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত আখতার খান। এদিন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আখতারের হয়ে জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবী জিনিয়া রুদ্র। বলেন, তাঁর মক্কেল ২০১৫ থেকে জেলবন্দি। এখনও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তা শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এই পরিস্থিতিতে তার অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করা হোক। সরকারি কৌঁসুলি নিগুইভ আহমেদ তৎক্ষণাৎ আদালতকে মনে করিয়ে দেন, আখতার খান পাক গুপ্তচর সংস্থার একজন সক্রিয় সদস্য হিসাবে ধৃত। তার বিরুদ্ধে একাধিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। এই বক্তব্য শুনে পত্রপাঠ তার জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
মামলা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫–র নভেম্বরে কলুটোলা স্ট্রিট থেকে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে ধরা পড়ে আখতার খান ওরফে মহম্মদ জাভেদ। তার কাছ থেকে পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির একাধিক তথ্য-সহ এক লক্ষ ৭২ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়। এরপর পুলিশি জেরায় জানা যায়, পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার একজন সক্রিয় সদস্য আখতার খান ১৯৮০-র দশকে পাকিস্তানে পাড়ি দিয়েছিল। প্রায় কুড়ি বছর সেখানে থাকার পর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতে ফিরে আইএসআইয়ের হয়ে চরবৃত্তি শুরু করে। মূলত বাংলা ও বিহার রিজিয়নের বিভিন্ন আর্মি ক্যান্টনমেন্টের মুভমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য পাচারের দায়িত্ব ছিল আখতারের কাঁধে। জেরায় সে স্বীকার করে নেয় পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার কাছে মেল ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সে তথ্য পাঠাত। এবং পানাগড়, শিলিগুড়ি ও বিহারের কাটিহারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। জেরায় এসটিএফ গোয়েন্দাদের আখতার আরও জানায়, আইএসআইয়ের যে স্লিপার সেলটি কলকাতায় কাজ করছিল তার মূল দায়িত্ব ছিল আখতারের কাঁধে। এছাড়াও পাকিস্তান আর্মির এক মেজরের নামও সে জেরায় জানায়। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের আইএসআই–এর দায়িত্বে থাকা মেজর আরশাদের কাছে সে সমস্ত তথ্য পাঠাত।
বাংলাদেশ ও নেপালে ছড়িয়ে থাকা পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সঙ্গেও তার প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ছিল বলে জানতে পারেন এসটিএফ গোয়েন্দারা। শুধু আখতার নয়, এই কাজে তাকে সাহায্য করত তার ভাই জাফর খানও। আখতারকে জেরায় এই তথ্য উঠে আসার পর জাফর খানকেও একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। জানা যায়, জাফরই আখতারকে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর ফিরে এসে দুই ভাই মিলে এ রাজ্যে চরবৃত্তির জাল ছড়ায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.