নিরুফা খাতুন: সামনে বড়দিন। ঐতিহ্যশালী এই দোকানে ক্রেতাদের চাপ থাকে। তাই মালিক নিজে ইজরায়েল থেকে ছুটে আসেন কলকাতায়। যুদ্ধ চলায় এবার হয়তো তাঁর আসা হবে না। বড়দিনের জন্য ফোনেই প্রস্তুতি সারছেন নাহুমসের মালিক আইজ্যাক নাহুমস। প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েলের যুদ্ধের জেরে বড়দিনের বিক্রিবাটায় কোনও প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন শতাব্দী প্রাচীন নাহুমস বেকারি কর্তৃপক্ষ ও কর্মীরা।
ইহুদি পরিবারের মালিকানাধীন কলকাতার প্রাচীনতম বেকারি। শহরের বুকে অনেক বেকারি চালু হয়েছে। কিন্তু নিউ মার্কেটের এই বেকারির ঐতিহ্য এতটুকুও কমেনি। তারকা, নেতা, মন্ত্রী, দেশ, বিদেশ থেকে আসা অতিথি এমন কেউ নেই যে, এই বেকারিতে পা রাখেননি। এই বেকারির বর্তমান মালিক আইজ্যাক। তিনি ইজরায়েলে থাকেন। যুদ্ধের মাঝে থেকেও কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। বড়দিনের জন্য বেকারি কারখানায় এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করে দিতে বলেছেন।
১৯০২ সালে এই কেকের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই সময় নাহুম ইজরায়েল মরদেকাই কেক তৈরি করে বাড়ি বাড়ি ফেরি করতেন। মাছেভাতে থাকা বাঙালিকে কেকের আসল স্বাদ চিনিয়েছিলেন তিনি। ১৯১৬ সালে হগ মার্কেটে নাহুমস অ্যান্ড সন্স নামে দোকান চালু করেন। শতাব্দী প্রাচীন এই দোকান হগ মার্কেটের ঐতিহ্যর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। বংশপরম্পরায় নাহুম পরিবার এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ডেভিড নাহুমের মৃত্যুর পর তাঁর ছোট ভাই আইজ্যাক এখন এই দোকানের মালিক। ডেভিড অবশ্য কলকাতায় থাকতেন। তবে আইজ্যাক থাকেন ইজরায়েলে। সেখানেও তাঁদের ব্যবসা রয়েছে। বছরে একবার কলকাতায় আসেন। ডিসেম্বর মাসটা এখানে কাটিয়ে যান। কর্মীদের জন্য উপহারও নিয়ে আসেন।
ডিসেম্বরে বড়দিনে এই বেকারির কেকের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই নিজে দোকানে বসে ক্রেতাদের চাপ সামলাতেন। এবারও ডিসেম্বরে তাঁর আসার কথা। কিন্তু এখন প্যালেস্তাইনের সঙ্গে ইজরায়েলের যুদ্ধ চলছে। কর্মী তারক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগের মালিক ডেভিড কলকাতায় থাকতেন। তিনি দোকান ও কারখানা, সবই দেখাশোনা করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছোট ভাই আইজ্যাক এই বেকারির মালিক। তিনি ইজরায়েলে থাকেন। ফোনেই ব্যবসার খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। বড়দিনে এখানে খুব চাপ থাকে। তাই ডিসেম্বরে প্রথমদিকে কলকাতায় চলে আসেন। একমাস দোকানে থাকেন। এই ডিসেম্বরে তাঁর আসার কথা। এখন সেখানে যুদ্ধ চলায় হয়তো তিনি এবছর আসতে পারবেন না। যদিও রোজই ফোনে কথা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত তিনি ও তাঁর পরিবারের সকলে নিরাপদে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। বড়দিনের প্রস্তুতিও শুরু করতে বলেছেন।”
এই বেকারির অধিকাংশ কর্মী হচ্ছেন মুসলিম। প্যালেস্তাইনদের ওপর আক্রমণ নিয়ে অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। এখানে মুসলিম কর্মীরা অবশ্য সেদেশের যুদ্ধ নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। আসিফ রেজা এক বছরের বেশি সময় ধরে এখানে কাজ করছেন। তাঁর কথায়, “যুদ্ধ ইজরায়েল সরকার করছে। আমাদের মালিক তো যুদ্ধ করছেন না। তিনি নিজেও এই যুদ্ধ চান না। ইজরায়েল থেকে ফোনে কর্মীদের খোঁজখবরও রাখছেন।” এদিকে যুদ্ধের জেরে ক্যানিং স্ট্রিটে থাকা ইহুদি উপসনাগুলি বহিরাগতদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একমাত্র ইহুদি ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.