Advertisement
Advertisement

সম্প্রসারণের তাগিদে সুতোয় ঝুলছে যশোর রোডের ৪৫০০ গাছের ভবিষ্যৎ

বিকল্প কিছু না ভাবলে বিপদ আসন্ন।

Over 4000 tress to be axed in Kolkata suburb
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 9, 2017 4:24 am
  • Updated:October 9, 2017 4:24 am  

শুভঙ্কর বসু: সালটা ছিল ১৮৪০। জমিদার কালিপ্রসন্ন রায়ের মায়ের ইচ্ছা হল তিনি গঙ্গাস্নানে যাবেন! কালীপ্রসন্নর জমিদারি ছিল যশোরে। আর সেকালে যশোর থেকে গঙ্গা ঘাট যাওয়ার কোনও রাস্তাও ছিল না! মায়ের ইচ্ছাপূরণে তাই রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গেলেন জমিদার। এদিকে মা তো গঙ্গাস্নানের জন্য উতলা। অগত্যা কোনও উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত নিজেই রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন কালীপ্রসন্ন। যশোরের বকচরে শুরু হল রাস্তা তৈরির কাজ। কয়েক হাজার লোক লাগিয়ে দু’বছরের মধ্যে নদিয়ার গঙ্গাঘাট পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে ফেললেন কালীপ্রসন্ন। তারপর থেকে ওই রাস্তার নাম হয়ে গেল যশোর রোড। যা আজকের ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক।

রাস্তা তৈরি পাশাপাশি আরেকটি কাজ করেছিলেন কালীপ্রসন্ন। পথচারীদের সুবিধার জন্য রাস্তার দু’ধারে সারি সারি গাছ লাগিয়েছিলেন। কালীপ্রসন্নর লাগানো সেই কয়েক হাজার চারাই আজ মহীরুহ। আর এই গাছগুলিকে কেন্দ্র করেই গোটা এলাকায় তৈরি হয়েছে একটি অনন্য বাস্তুতন্ত্র। কিন্তু কে জানত দু’দেশের সরকারি সিদ্ধান্তে এক বড়সড় বিপদ ঘনিয়ে আসবে এখানকার জীববৈচিত্রে? দেশ ভাগের পর খানিকটা মাঝখান থেকে কাটা পড়ে যশোর রোড। অর্ধেক এপারে আর বাকিটা ওপার বাংলায়।

Advertisement

[ভাঙা মন্দির গড়তে এগিয়ে এলেন মুসলিমরা, ভাতারে উজ্জ্বল সম্প্রীতি]

প্রথমে বাংলাদেশ সরকার তাদের অংশের ৩৮ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা জানায় এই প্রকল্পের জন্য কাটা পড়বে অন্তত ২৬০০ গাছ। দ্বিতীয় ধাক্কাটা আসে এপার বাংলা থেকে। হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়াও ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক বা ভারতের অংশের যশোর রোড সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারাও জানায় বারাসতের ডাকবাংলো মোড় থেকে বেনাপোল সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য কাটা পড়বে অন্তত ৪৫০০ গাছ। আর এখানেই বড়সড় বিপদ দেখছেন পরিবেশবিদরা। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন এমনটা হলে গোটা এলাকায় আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তন হতে পারে।

পরিবেশবিদ হীরক নন্দীর বক্তব্য, কোনও এলাকায় হঠাৎ এত সংখ্যক গাছ কাটা পড়লে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব পড়তে বাধ্য। যদিও দু’দেশের এই সরকারি সিদ্ধান্তের পরই গাছ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন দু’দেশের পরিবেশপ্রেমী মানুষ। বাংলাদেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত রাস্তা বাঁচানোর আন্দোলন। ১৯৭১-এ যশোর রোডের ওই অংশে এসে প্রাণে বাঁচেন বহু মানুষ। আশার কথা, লাগাতার আন্দোলনের জেরে ইতিমধ্যেই গাছ কাটার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু এদেশে? এপার বাংলাতেও গাছ বাঁচাতে লড়াই কম হয়নি। চিপকো আন্দোলনের ধাঁচে বুক দিয়ে গাছ আগলেছেন পরিবেশপ্রেমী সাধারণ মানুষ। গড়ে উঠেছে পরিবেশ বাঁচাও মঞ্চ। তবুও গাছ কাটার সিদ্ধান্ত এখনও প্রত্যাহার করেনি হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। হাই কোর্টের নির্দেশে আপাতত গাছ কাটা স্থগিত রয়েছে। স্থগিতাদেশের মেয়াদ রয়েছে নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু তারপর? বিকল্প কিছু না ভাবলে বিপদ আসন্ন।

[গরু পিছু ৫ হাজার! পাচারে হাত পাকাচ্ছে সীমান্তবর্তী পড়ুয়ারা]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement