সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীপাবলির রাতে ফের শহরে অঙ্গ প্রতিস্থাপন। আমরিতে ব্রেন ডেথ সোনারপুরের তরুণী দেবলীনা ঘোষের। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বুকে চেপেই দেবলীনার বিভিন্ন অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর অভিভাবকরা। রাতেই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়টি স্থির হয়। তারপর তড়িঘড়ি ফর্টিস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেবলীনার হৃদযন্ত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সেখানে। ফর্টিসেই হার্টের রোগ নিয়ে ভরতি আছেন বহরমপুরের তনয়া পণ্ডিত। রাতেই অস্ত্রোপচার হয়ে, দেবলীনার হৃদযন্ত্র বসেছে তনয়ার শরীরে। একইভাবে কিডনি দুটি পেয়েছেন হুগলির কেয়া দাঁ ও অনিতা ঘোষ। লিভারটিও প্রতিস্থাপনের কথা ছিল। তবে লিভারে কিছু সমস্যা তা থাকায় তা প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি।
জানা গিয়েছে, হুগলির ধনেখালির বাসিন্দা অনিতা ঘোষ (৪৫) গৃহবধূ। কিডনির সমস্যা নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন এসএসকেএমে ভরতি আছেন। রাতেই তাঁর পরিবারকে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়। রাত এগারোটার কিছু পরে আমরিতে দেবলীনার মৃত্যু হলে। কলকাতা পুলিশের গ্রিন করিডর দুটি কিডনিকে দ্রুততার সঙ্গে এসএসকেএমে পৌঁছে দেয়। তারপর ভোররাতেই চিকিৎসকদের একটি দল অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ করেছেন। অনিতা ঘোষের পাশাপাশি একইভাবে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে পাণ্ডুয়ার কলেজ ছাত্রী কেয়া দাঁ-র। অস্ত্রোপচার সফল হলেও বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকরা এখনই মুখ খোলেননি। তবে জানা যাচ্ছে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে কেয়া দাঁ-র বয়স অনেক কম। নতুন অঙ্গের সঙ্গে তাঁর শরীর খুব তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারবে। সুস্থও হয়ে উঠবেন দ্রুত। অনিতাদেবীও সুস্থতার দিকে এগোবেন দ্রুত। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরেও বেশ খানিকটা কঠিন সময় যায়। যখন রোগীদের পর্যবেক্ষণে রাখাটা খুব জরুরি। এই মুহূর্তে এসএসকেএমে সেটাই চলছে। তবে মোটের উপর অস্ত্রোপচার সফলই হয়েছে।
অন্যদিকে এসএসকেএমেই ভরতি রয়েছেন জয়প্রতিম ঘোষ। তিনি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর শারীরিক সুস্থতার জন্যও অঙ্গ প্রতিস্থাপন জরুরি ছিল। রবিবার রাতে জয়প্রতিমবাবুর পরিবারকেও লিভার পাওয়ার খবর দেওয়া হয়। হুগলির বাড়ি থেকে স্বজনরা ছুটে আসেন। ততক্ষণে আমরি থেকে গ্রিন করিডরের মাধ্যমে লিভার এসে পৌঁছেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান, দেবলীনার লিভারে ফ্যাট জমেছে। জয়প্রতিমবাবুর শরীরে তা প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। রোগীর পরিবারের লোকজন এই ঘটনায় আশাহত হন।
অন্যদিকে ফর্টিসে বহরমপুরের তনয়া পণ্ডিতের শরীরে হৃদযন্ত্রের প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে। দেবলীনার চোখ দুটি আপাতত শংকর নেত্রালয়ে রাখা হয়েছে। মেয়ের অঙ্গদানের মধ্যে দিয়েই শান্তি খুঁজে নিয়েছেন ঘোষ দম্পতি। দেবলীনা তাঁদের একমাত্র সন্তান। জন্মের আড়াই মাস পরেই তার অসুস্থতা ধরা পড়ে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে জানা যায়, একরত্তির মাথায় জল জমেছে। পরে তার মাথায় সান টিউব বসিয়ে দেন চিকিৎসকরা। শৈশবথেকে স্পেশ্যাল চাইল্ড দেবলীনা ভালই ছিলেন। ২৫ বছরে সেই মাথা যন্ত্রণা আর তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়নি। বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বাবা গৃহবধূ মা মেয়েকে আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু বাদ সাদল ভাগ্য। বুধবার রাতে সেই মাথাযন্ত্রণা ফিরে আসে। সান টিউব কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলাতেই এই বিপত্তি। তড়িঘড়ি আমরিতে ভরতি করা হয় দেবলীনাকে। চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দীপাবলির রাতে মৃত্যু হয় ওই তরুণীর। একমাত্র সন্তান হারানোর প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে মেয়ের বিভিন্ন অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন অরুণবাবু ও তাঁর স্ত্রী। তাঁদের আশা এই অঙ্গদানের মধ্যেই বেঁচে থাকবে মেয়ে দেবলীনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.