অর্ণব আইচ: দূর থেকে দেখলে মনে হবে সেনাবাহিনীর তাঁবু। জঙ্গল বা গাছপালার সঙ্গে মানানসই জলপাই রঙের। কিন্তু ভিতরে ঢুকলে বোঝা যায় পার্থক্যটা। কারণ, এ তাঁবু রীতিমতো কোয়ারেন্টাইন সেন্টার! সাড়ে নয় বর্গমিটার তাঁবুর মধ্যেই পারস্পরিক দূরত্ব মেনেই রয়েছে দু’টি বেড। প্রয়োজনে সেখানেই করোনা রোগীদের অথবা যে কাউকে সহজেই কোয়ারেন্টাইন করা যাবে। এই ‘কোয়ারেন্টাইন টেন্ট’ তৈরি করেছে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড।
OFB-র যুগ্ম অধিকর্তা ড. উদ্দীপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “কানপুরে কেন্দ্রীয় সরকারের অস্ত্র কারখানায় তৈরি করা হয়েছে এই ‘কোয়ারেন্টাইন তাঁবু’। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক তাঁবু আমরা প্রয়োজনে সরবরাহ করতে পারি। রাজ্য সরকার চাইলেও প্রস্তুত রয়েছে তাঁবু। ইতিমধ্যেই অরুণাচল সরকারকে ৫০টি ‘কোয়ারেন্টাইন তাঁবু’ সরবরাহ করা হয়েছে।” জানা গিয়েছে, এই রাজ্যের কয়েকটি জেলার প্রশাসনও এই তাঁবুর বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ ছাড়াও ইছাপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হয়েছে ‘ফেস শিল্ড’। করোনা রোধে স্বচ্ছ এই ‘ফেস শিল্ড’ মুখে পরলে মাস্কও লাগছে না। বহু চিকিৎসক ও পুলিশকর্মী ডিউটির সময় ‘ফেস শিল্ড’ ব্যবহারও করছেন।অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই এই ‘কোয়ারেন্টাইন তাঁবু’ তৈরি করা হয়েছে। সাধারণভাবে দূর থেকে অন্যান্য কয়েকটি সেনা তাঁবুর মতোই লাগে এটিকে। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় যে, তাঁবুর ভিতর রয়েছে দু’টি বিছানা। ওই দু’টির মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব রাখা হয়েছে। তার উপর ভিতরে রয়েছে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি। ইসিজি-র যন্ত্র থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সবকিছুই ভিতরে রাখা সম্ভব।
কোনও করোনা আক্রান্ত রোগীকে যদি প্রয়োজনে ওই তাঁবুতে রাখতে হয়, তবে তাঁর চিকিৎসার জন্য যা যা যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, তা-ও রাখা যেতে পারে দু’টি বিছানার মাঝখানে। কোনও চিকিৎসক বা নার্স এসে যাতে তাঁবুর ভিতর বসে ওই রোগীদের দেখতে বা সেবা করতে পারেন, সেই জায়গাও রাখা আছে। সরকারি অস্ত্র কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট মাপের তাঁবুতে প্রয়োজন হলে একটি বিছানা রাখা সম্ভব। তার সঙ্গে চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও। তাঁবুটি সম্পূর্ণ ওয়াটারপ্রুফ। চেন দিয়ে তার ‘দরজা’ বন্ধ করার ব্যবস্থাও থাকছে। বাইরে যদি বৃষ্টিও হয়, তাঁবুর ভিতর থাকা রোগীর কোনও সমস্যা হবে না। তাঁবুর কাঠামো হালকা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি। তার ফলে যখন কাজে লাগবে না, তখন বিছানাপত্র-সহ তা গুটিয়ে রাখা যায়। কাপড় ও কাঠামোর ওজন হালকা বলে তা বহনযোগ্যও। OFB-র তরফে জানা গিয়েছে, যে কোনও প্রত্যন্ত জায়গায় এই তাঁবু নিয়ে যাতায়াত করা সম্ভব। সেনাবাহিনীর কোনও শিবিরে যদি করোনা চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তাই সেনাকর্মীদের আলাদা করে রাখার জন্য এই তাঁবু কাজে লাগানো হতে পারে। আবার এমন কোনও জায়গা, যেখান থেকে কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র অনেকটাই দূরে, সেখানেও এই তাঁবু নিয়ে গেলে সহজেই কোয়ারান্টাইন সেন্টার তৈরি করা যায়। তার জন্য অল্প জায়গা হলেই হবে। রাজ্য প্রশাসন চাইলে অল্প সময়ের মধ্যে এই তাঁবু পৌঁছে দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে ওএফবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.