ফাইল ছবি।
দীপালি সেন: বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন। শহরকে পিছনে ফেলে এবারও মাধ্যমিকের (Madhyamik Exam 2022) মেধাতালিকায় বাজিমাত জেলার। মেধাতালিকায় আরও তিনজনের সঙ্গে চতুর্থ স্থান অধিকার করে পাঠভবনের শ্রুতর্ষি পাঠক তিলোত্তমার মুখরক্ষা করেছে বটে। কিন্তু, কলকাতা কেন পিছিয়ে? সেই প্রশ্ন থেকে অব্যাহতি দিতে পারেনি। এমনকী পাসের হারে ২০২০ সালের তৃতীয় স্থান থেকেও একধাপ নেমে চতুর্থ স্থানে চলে এসেছে কলকাতা। কিন্তু, কেন পিছিয়ে কলকাতা? মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের বাংলা মাধ্যম থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়াকেই প্রধান কারণ হিসাবে দেখছেন কলকাতার নামী স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকরা। সঙ্গে শহরের ছাত্র-ছাত্রীদের অতি সহজেই মনোযোগ ভ্রষ্ট হওয়াকেও কিছুটা দায়ী করছেন তাঁরা।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত মাধ্যমিকে ধারাবাহিকভাবে শহরের পড়ুয়াদের পিছিয়ে থাকার পিছনে বেশ কয়েকটি যুক্তি দিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম, এক সময়ে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলি থেকে ইংরেজি ভাষা তুলে দেওয়ার কারণে সাধারণ মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের বাংলা মাধ্যম থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া। শুভ্রজিৎবাবু বলেন, ‘‘যাদের বাবা-মা একসময় বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করে উচ্চপ্রতিষ্ঠিত, তাঁদের সন্তানসন্ততিকেই তাঁরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভরতি করছেন। শহরের নামী সিবিএসই ও আইসিএসই স্কুলগুলির ফলাফল দেখলে দেখা যায়, তারা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভাল ফলাফল করছে, র্যাংক করছে। তারাই বাংলা মাধ্যমে পড়লে হয়তো মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় জায়গা করে নিত। কিন্তু, মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের প্রথম পছন্দ এখন বাংলা মাধ্যম নয়।’’
শহরের একটা বড় অংশের পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য, সর্বভারতীয় জয়েন্ট বা নিট পরীক্ষা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিক্যাল পড়া। সিবিএসই ও আইসিএসই স্কুলগুলিতে পড়লে এই পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অনেকটাই এগিয়ে থাকা যায় বলে ধারণা প্রচলিত রয়েছে। সেকারণেও শহরের পড়ুয়াদের অধিকাংশ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলকেই বেছে নেয়। এমনটাই মত বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাশ্বতী অধিকারীর। বলেন, ‘‘সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলো দেওয়ার জন্য সিবিএসই (CBSE) ও আইসিএসই বোর্ডের একটা প্রভাব রয়েছে। ধারণা রয়েছে, ওখানে পড়লে প্রস্তুতিটা অনেকটা হয়ে যাবে। তাই ভাল ছেলেমেয়েরা ওই স্কুলগুলোকেই পছন্দ করছে। এগুলো একটা কারণ তো বটেই।’’ শহরে ইংরেজি মাধ্যমের চাহিদা বেশির মতের সঙ্গে সহমত স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিভাস সান্যালও। পাশাপাশি, শহরের বাচ্চাদের মনোযোগ সহজেই নষ্ট হয়ে যাওয়াকেও মাধ্যমিকে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসাবে দেখছেন তিনি। বিভাসবাবু বলেন, ‘‘শহরের পড়ুয়াদের ডিস্ট্রাকশনটা অনেক বেশি। শহরে ঘোরাফেরার জায়গা বেশি। ফলে, সহজেই মনোযোগ নষ্ট হয়। গ্রামের দিকে সেটা অতটা থাকে না।’’
সিবিএসই-আইসিএসই বোর্ডের সিলেবাসে নম্বর বেশি পাওয়া যায়। এই ধারণা থেকেও ওই বোর্ডের স্কুলগুলিতে পড়া পছন্দ করে শহরের একটা বড় অংশের পড়ুয়া। যদিও, পর্ষদ সেই যুক্তি খারিজ করে দেয় প্রতিবারই। তবে, এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষাকে একটু অন্যভাবে দেখছে প্রধান শিক্ষকদের একাংশ। অতিমারীর কারণে পরীক্ষায় বসার অনভ্যাস, স্কুলে না আসায় পঠন-পাঠনে পিছিয়ে পড়ার মতো বিষয়গুলির কথা তুলছেন তাঁরা। শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পাপিয়া নাগ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি একটা বড় কারণ। দু’বছর ধরে কোনও পরীক্ষা দিতে পারেনি পড়ুয়ারা। এই পরীক্ষাটাই দিতে পারল। সেটাও আশানুরূপ ফল না হওয়ার একটা কারণ হতে পারে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.