স্টাফ রিপোর্টার: নামে পিঁয়াজি। কিন্তু তার ভিতরে পিঁয়াজ বাদে সব আছে। পিঁয়াজের অভাব পূরণ করছে বাঁধাকপির পাতা। বিয়েবাড়ির পাতে স্যালাড থেকেও বাদ পড়েছে সে। গেরস্থের ঘরে অনেকেই পিঁয়াজ ছাড়াই রান্না করছেন মাংস। ঝালমুড়ি বা পাপড়ি চাটে পিঁয়াজ দিতে বললে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দু’টাকা। পিঁয়াজের দামের ঝাঁজে একেবারে বেসামাল হেঁশেল।
ইডেনে টেস্টের পিংক বল যেমন কাঁদাল বাংলাদেশিদের। তেমনই বাজারের পিংক বল কাঁদাচ্ছে মধ্যবিত্ত গেরস্তকে। ব্যবসায়ীদের কথায়, একেবারে বিরাটের মতো ব্যাট চালাচ্ছে পিঁয়াজ। বিরাটকে তো তবু আউট করা গিয়েছে সেঞ্চুরির পর। কিন্তু পিঁয়াজ শেষ পর্যন্ত কত টাকায় গিয়ে থামবে তা জানেন না কেউ। রবিবারের সকালেই শহর-শহরতলির একাধিক বাজারে সেঞ্চুরি হাঁকাল পিঁয়াজ। কলকাতার এন্টালি, পাটুলি-সহ একাধিক বাজারে পিঁয়াজের দাম ছিল ১০০ টাকা কিলো। ছোট পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কিলো দরে। গত সপ্তাহেই এন্টালি মার্কেটে বড় পিঁয়াজের দাম ছিল ৮০ টাকা কেজি। ছোট পিঁয়াজের দাম ছিল ৭০ টাকা কেজি। ভিন রাজ্য থেকে পিঁয়াজ আমদানিতে টান পড়াতেই বাজার গরম। দাবি বিক্রেতাদের।
পুজোর মরশুমের আগে থেকেই দেশজুড়ে বাড়তে শুরু করেছিল পিঁয়াজের দাম। মে মাসের আগেও খুচরো বাজারে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল পিঁয়াজ। কিন্তু তার দাম এবার কোথায় গিয়ে থামবে তা বলতে পারছেন না কেউ। ব্যবসায়ীদের কথায়, ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে যতক্ষণ না নতুন পিঁয়াজ উঠছে, আমদানি হচ্ছে, ততদিন এই দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। ফলে তা আগামী কিছুদিনের মধ্যে ১৫০ টাকা প্রতি কেজিও ছাড়াতে পারে।
এরাজ্যে পিঁয়াজ কোনওদিনই খুব একটা ফলে না। পিঁয়াজের জন্য বাংলাকে নির্ভর করতে হয় মহারাষ্ট্রের নাসিক, কর্ণাটকের মাকলি ও অন্ধ্রের কুরনুলের উপর। চলতি বছরে অতি বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি হয় নাসিক ও মাকলিতে। ক্ষতি হয় পিঁয়াজ চাষে। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারে। আমদানি হয়েছে কম। পাশাপাশি নাসিক থেকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় পিঁয়াজ রপ্তানি গত কয়েক বছরে বেড়েছে। এর জেরে বাজারে পিঁয়াজের সরবরাহে টান পড়েছে।
রাজ্যে প্রতি মাসে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন পিঁয়াজ লাগে। তা আসে ভিন রাজ্য থেকেই। কিন্তু এবার সেই আমদানিতে ঘাটতি রয়েছে। ধরা যাক শিয়ালদহ কোলে মার্কেট। মাস দেড়েক আগেও প্রতি দিন ৮-১০ গাড়ি পিঁয়াজ ঢুকত এখানে। এখন সেই পরিমাণটা এসে দাঁড়িয়েছে এক গাড়িতে। কখনও কখনও দু’গাড়ি। ফলে এই যে পিঁয়াজের ঘাটতি, তাতেই বাজারে গিয়ে চোখে জল আসছে মধ্যবিত্তের। রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের শত নজরদারিতেও যে পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব নয়, সেকথা শোনা যাচ্ছে বিক্রেতাদের কথায়। কারণ, জোগানে ঘাটতি। নতুন পিঁয়াজ ওঠা পর্যন্ত এই সমস্যা চলবে। শুধু তাই নয়। সূত্রের খবর, রাজ্যে ট্রাকে করে যে পিঁয়াজ আমদানি হয় মাঝপথে তা লুটও হয়ে যাচ্ছে। ট্রাক-মালিককে একই ভাড়ার টাকা দিয়ে পিঁয়াজ নামিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে খড়গপুরে। যে কারণে কলকাতায় পিঁয়াজ আসা আরও কমে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের কৃষি বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের সদস্য এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেন্ডর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে বলেন, “ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ নতুন পিঁয়াজ উঠবে। তখন দাম কমতে থাকবে। পিঁয়াজের ঘাটতির কারণেই দাম এত বাড়ছে। এখনই বলা যাবে না এই দাম কোথায় যাবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.