নব্যেন্দু হাজরা: হোটেল-রেস্তরাঁ এখনও খোলেনি পুরোপুরি। বন্ধ রাস্তার পাশের লাইন হোটেলও। সন্ধে হলেই ডালবড়া বা পিঁয়াজি দিয়ে মুড়ি মুখে তোলার সময়ও এটা নয়। তাই পিঁয়াজের (Onion) চাহিদা এখনও কম। অথচ তাতেও শেষ পাঁচদিনে কেজিতে তার দাম বেড়েছে ১০ টাকা। মে মাসের শেষ দিনও যে পিঁয়াজ ৩০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে, জুনের পাঁচ তারিখেই তার দাম উঠেছে ৪০ টাকা। বাজার হেরফেরে ভাল পিঁয়াজের দাম কোথাও আর একটু বেশি। কারণ একটাই, জোগানে টান। হোটেল, রেস্তরাঁ খোলা হলে বাজারের বেশিরভাগ পিঁয়াজই চলে যাবে সেখানে। তখনও যদি জোগান স্বাভাবিক না হয়, সেক্ষেত্রে রকেটের গতিতে বাড়তে পারে এই গোলাপি ফসলের দাম।
পিঁয়াজের মূল্য পার করতে পারে সেঞ্চুরিও। যেমনটা হয়েছিল ২০১৯ সালে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গিয়েছে। লোকের হাতে টাকা নেই। ফলে বিক্রি কমেছে। কিন্তু জোগানও এতটাই কমেছে যে তা সত্বেও মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। সঙ্গে পরিবহণের খরচ বাড়ায় আরও তা বাড়ছে। করোনার (Coronavirus) ভয়াবহতা এবং কার্যত লকডাউনের (Lockdown) আগে দিনে ২৫-৩০ ট্রাক পিঁয়াজ শহরে আসত কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য। এখন তা কমে ৮-১০ ট্রাক আসছে পিঁয়াজের। তবু লোকে কিনছে কম, তাতেই পুষিয়ে যাচ্ছে। বাজারে কোনও সংকট নেই। কিন্তু পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়াতেই পাইকারি বাজারেও দাম বেড়েছে। এরপর হোটেল, রেস্তরাঁ খুলে গেল জোগানে ঘাটতি হবে পিঁয়াজের। তখনই দাম বাড়বে বিদ্যুতের গতিতে। কোলে মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর কথায়, মূলত নাসিকের পিঁয়াজই এই সময় এখানে থাকে। করোনার কারণে নাসিক থেকেই তা আমদানি হচ্ছে কম। আগে যেখানে ২৪ ঘণ্টাই এসব নিয়ে ট্রাক চলাচল করত, মাঝে তা কমে চার পাঁচ ঘণ্টা হয়েছিল। রাজস্থানের পিঁয়াজ এখনও রাজ্যে ঢোকেনি। তাই জোগান ঠিক না হলে দিন দিন পিঁয়াজের দাম বাড়বেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছরই একটা নির্দিষ্ট সময়ে পিঁয়াজের দাম বাড়ে। সেটা অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ। এ বছর পিঁয়াজের দাম এত তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকাই চিন্তা বাড়িয়েছে। তাঁদের কথায়, দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হল – বাংলার পিঁয়াজের সামান্য যে স্টক তাও আপাতত শেষ। এখন বাজারে পেঁয়াজ বলতে যা আছে তা পুরোটাই নাসিক থেকে আনা। করোনা পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্র হোক বা বাংলা, হাজারো বিধি-নিষেধ। তাই নাসিক থেকে পিঁয়াজ আনতে পরিবহণের জন্য বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিদিন ঊর্ধ্বমুখী পেট্রোল-ডিজেলের দাম। সেই দাম যোগ হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে। তাতেই বাড়ছে দাম।
জ্বালানি ও জোগান – দুই শর্তই মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস তুলছে। বণিকমহল মনে করছে, নির্বাচনের ডামাডোলে বাংলার পিঁয়াজ রপ্তানি হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশে। এই কারণেই বাংলার পিঁয়াজ মে মাসের শুরুতেই শেষ। এর মাশুল আগামী দিনেও গুনতে হবে মধ্যবিত্তকে। ব্যবসায়ীদের কথায়, করোনা, লকডাউন – এই দুইয়ের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। গরিব-নিম্ন মধ্যবিত্ত মাছ মাংস খাচ্ছে কম। ফলে পিঁয়াজও কিনছে কম। তাছাড়া হোটেল, রেস্টুরেন্ট এতদিন বন্ধ থাকায় সেখানেও পিঁয়াজ লাগেনি। তাতেও দাম বেড়েছে। রাজ্যে আসা বেশিরভাগ পিঁয়াজ চলে যায় লাইনের হোটেল, রেস্টুরেন্টে। এগুলো খুললে চাহিদা বাড়বে। তখন পিঁয়াজের দামও আরও বাড়ার আশঙ্কা। ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেন্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে বলেন, “জোগান না বাড়লে দাম আরও বাড়বে। নাসিক থেকেই মাল আসছে কম। তা দিয়েই চাহিদা সামাল দেওয়া হচ্ছে। এরপর যদি হোটেলগুলো খুলে যায়, তখন চাহিদা আরও বাড়বে। দামও বাড়বে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.