Advertisement
Advertisement
Swasthya Bhaban

উত্তরবঙ্গ লবির ‘চাপ’! আবদার না মানায় চাকরি ছাড়তে হয়েছিল স্বাস্থ‌্যভবনের কর্তাকে

‘আমি দাঁতের ডাক্তার, কিন্তু ওরা আমারই আক্কেল দাঁত গজিয়ে দিয়েছিল’, ৯ বছর পরও তাড়া করে ফেরে সেই স্মৃতি।

One of the officials from Swasthya Bhaban had to resign after pressure from 'North Bengal lobby'

ফাইল ছবি।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 12, 2024 12:00 pm
  • Updated:September 12, 2024 12:05 pm

ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ? ভুলেও নয়! পরিণাম কী হয়, মর্মে মর্মে গাঁথা আছে যে! প্রায় ন বছর পার। কিন্তু তথাকথিত ‘উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেটে’র স্মৃতি এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে এক সরকারি চিকিৎসককে। তিনি ডাঃ প্রদ্যোৎ বিশ্বাস। প্রথিতযশা দন্ত চিকিৎসক। ‘‘আমি দাঁতের ডাক্তার। কিন্তু ওরা আমারই আক্কেল দাঁত গজিয়ে দিয়েছিল।’’ ৯ বছর বাদে স্মৃতিচারণ করতে বসে তিক্ত-সরস মন্তব‌্য প্রদ‌্যুৎবাবুর। কী হয়েছিল?

২০১৬ সালের ঘটনা। প্রদ‌্যুৎবাবু তখন রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ‌্য অধিকর্তা (ডেন্টাল), পোস্টিং খাস কলকাতার স্বাস্থ‌্যভবনে। উত্তরবঙ্গ লবির অযৌক্তিক ও অনৈতিক দাবি মানতে রাজি হননি। শেষে এক রাতে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছেন যখন, তাঁর নামে নোটিস বেরিয়ে গেল। তাতে নির্দেশ, পরদিনই উত্তর দিনাজপুরের ‘জোগান গ্রামীণ হাসপাতালে’ গিয়ে যোগ দিতে হবে। একরোখা সরকারি চিকিৎসক নির্দেশ মানেননি। মাশুল গুনতে হয়েছিল কড়ায় গণ্ডায়। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। প্রদ‌্যুৎবাবু পত্রপাঠ চাকরি ছেড়ে দেন, গুটিয়ে ফেলেন স‌্যালারি অ‌্যাকাউন্ট। সরকারের বিরুদ্ধে মামলাকে করে জেতেন। তাঁকে রিলিজ করতে হবে, স্বাস্থ‌্যভবনকে এমনই নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু মাথাভারী স্বাস্থ‌্যভবনের উত্তরবঙ্গ লবি তখনও শেষ কথা। তাই কোর্টের নির্দেশ ঝুলে থাকে। শেষমেশ সম্মানজনক শর্তে ফের সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারলেও মানসিক অশান্তি তুঙ্গে উঠেছিল।

Advertisement

[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন ‘ষড়যন্ত্রের মাথা’ মানিক ভট্টাচার্যের, হবে জেলমুক্তি?]

সমস‌্যা হল, শেষ কয়েক বছর নিরুপদ্রবে কাটালেও আবার তাঁর পিছনে ‘ফেউ’ লেগেছে। ‘ফেউ’টি হলেন ‘কীর্তিমান’ বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের স‌্যাঙাৎ হিসেবে পরিচিত ডাঃ সুজয়েশ হালদার। অভিযোগ, এই ডামাডোলের বাজারেও তিনি ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসকের থেকে তোলা আদায় করছেন। অভিযোগ রীতিমতো ভাইরাল! যদিও সুজয়েশ এই অভিযোগ মানতে নারাজ। উলটে বুধবার তাঁর দাবি, আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে অবাধ যাতায়াত ছিল তাঁর ‘গুরু’ বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের। সেই সূত্রে এখনও সম্পর্ক অটুট।

স্বাস্থ‌্যমহলের অন্দরের খবর, শুধু পরিচয় নয়, বিরূপাক্ষর দৌলতেই উত্তরবঙ্গের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের দৌলতেই উত্তরকন‌্যায় সরকারপন্থী ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ‌্যাসোসিয়েশন (ডেন্টাল) শাখা খুলতে উত্তরবঙ্গে অবাধ যাতায়াত শুরু হয়। ডাঃ সুশান্ত রায়ের সঙ্গে পরিচয়। পরিচয় হয় সিন্ডিকেটের আরও ছোট, বড় নেতার সঙ্গে। অভিযোগ,বিরূপাক্ষ-অভিক-সুজয়েশ এই তিন জুটির দৌলতে তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। কলকাতা তথা শহরের খ‌্যাতনামা, প্রতিষ্ঠিত ডেন্টাল সার্জেন তথা অধ‌্যাপকদের সফট টার্গেট করে তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। অধ‌্যাপক-চিকিৎসকদের মধ্যে কার্যত বিভাজন তৈরি করতে সমান্তরাল ‘সিন্ডিকেট রাজ’ চালু করা হয়েছে। ডাক্তার তপন গিরি, ডাক্তার তীর্থঙ্কর দেবনাথের মতো চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রীতিমত ভাইরাল করা হয়েছে এই সিন্ডিকেট।

[আরও পড়ুন: আর জি করের বর্জ্য পাচারে ‘বাংলাদেশি রবি’র নাম, কীভাবে সন্দীপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা? তদন্তে সিবিআই]

এখন প্রশ্ন সিন্ডিকেট বা ট্রান্সফার-পোস্টিংয়ের নীল নকশা কোথায় তৈরি হত? সুজয়েশ সরাসরি উত্তর দেয়নি। তবে ইঙ্গিত সেই আর জি কর অথবা সাগর দত্ত মেডিক‌্যাল কলেজ হাসাপাতাল। ফি শনি ও রবিবার কলেজ হাসপাতালের কেয়ার টেকারের থেকে বিভিন্ন অছিলায় চাবি জোগাড় করে কলেজের অফিস অথবা বয়েজ হোস্টেলে শুরু হত টানা আলোচনা। আলোচনার রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হত বর্ধমানে। সূত্রের খবর, জেলার নারায়ণগড়ে কোনও এক চিকিৎসক নেতার বাড়িতে বসে সব তথ‌্য ঝাড়াই-বাছাই করে পাঠানো হত উত্তরবঙ্গ লবির কোর গ্রুপে। সেখান থেকেই চূড়ান্ত নির্দেশ যেত স্বাস্থ‌্যভবনে। বাকিটা প্রদ্যুৎবাবুর মতো। এক অধ‌্যাপকের কথায়, ‘‘সিন্ডিকেটের নির্দেশ মেনে নিলে বছরের পর বছর নিশ্চিন্তে চাকরি। আর না মানলে ডাক্তার প্রদ্যুৎ বিশ্বাসের কী অবস্থা হয়েছিল তা আরেকবার মনে করতে হবে।’’

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement