অর্ণব আইচ: কসবার ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে (Kasba Fake Vaccination) গ্রেপ্তার দেবাঞ্জন দেবের আরও এক সহযোগী। পুলিশ সূত্রে খবর, দেবাঞ্জনের সংস্থায় কাজ করতেন ধৃত ইন্দ্রজিত্ সাউ। ট্যাংরার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি।
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার সিটি কলেজে (City College) যে ভুয়ো টিকাকরণ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন এই ইন্দ্রজিত্। তিনিই দেবাঞ্জনকে সিটি কলেজের সেই ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলেন। শুক্রবার সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের কাছে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট থেকে দেবাঞ্জন দেবের ওই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ। আর কোথায় কোথায় ভুয়ো ক্যাম্পের আয়োজন করেছিলেন দেবাঞ্জন, ইন্দ্রজিৎকে জেরা করে সেসব তথ্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জনের প্রাক্তন কর্মচারী ইন্দ্রজিৎ সাউ জানান, তিনি গত মার্চ মাসে চাকরি পান। কসবার রাজডাঙার ভুয়ো পুরসভা অফিসে তাঁকে হেডক্লার্ক হিসাবেই নিয়োগ করে দেবাঞ্জন। তিনি বুঝতেও পারেননি যে, এটি ভুয়ো পুরসভা অফিস। কর্মচারীদের কাছে দেবাঞ্জন নাকি দাবি করত, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ৬৭ র্যাঙ্ক করেছিল সে। কিন্তু ডাক্তারি না পড়ে ‘জনসেবা’র জন্য ‘আমলা’ হয়েছে। আর সে যে ডাক্তারিও জানে, তার প্রমাণ করতে গিয়ে ইন্দ্রজিতের প্রাণ বিপন্ন করে তুলেছিল।
শরীর খারাপ লাগছিল ওই কর্মীর। তাই অফিসে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। তা চোখে পড়ে যায় দেবাঞ্জনের। দেবাঞ্জন দাবি করে, ওই কর্মচারীর হৃদরোগ হয়েছে। তাই তাঁর হৃদরোগের চিকিৎসার প্রয়োজন। দেবাঞ্জন ওই অসুস্থ কর্মচারীকে ডেকে ‘সরবিট্রেট’ দেয়। অনেকটা জোর করেই তাঁকে সেই ওষুধটি খেতে বলে। যেহেতু নিজেকে দেবাঞ্জন আইএএস বলে পরিচয় দিত, তাই ইন্দ্রজিৎ তাঁকে অগ্রাহ্যও করতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়েই তিনি ওই জীবনদায়ী ওষুধটি খান। এরপর সেরে ওঠার বদলে তাঁর শরীর আরও খারাপ হতে শুরু করে। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। সাত ঘণ্টার উপর তাঁর চিকিৎসা চলে। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হতে শুরু করেন। কিন্তু এরপরও কসবার অফিসে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না ওই কর্মচারীর।
ইন্দ্রজিতের কথায়, তিনি অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মধ্য কলকাতার তালতলায় যাতায়াতের সূত্রেই দেবাঞ্জনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তালতলায় এক রাজনৈতিক নেতার পুজোয় উপস্থিত থাকত দেবাঞ্জন। তার সঙ্গে থাকা নীলবাতি লাগানো গাড়ি, আইএএস পরিচয়, চালচলন দেখে সবাই তাকে সম্ভ্রমই করত। সেই সুযোগে সে বহু যুবক- যুবতীকে কসবায় ‘পুরসভার অফিসে’ চাকরি দেবে বলে জানায়। তেমনই এক ‘শিকার’ ছিলেন ইন্দ্রজিৎ। সাড়ে ২৩ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হত তাঁকে। যদিও দেবাঞ্জন গ্রেপ্তার হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই কর্মচারীদের চাকরি আর নেই। অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর্থিক সংকটের মুখেও পড়েছেন তাঁরা। সিটি কলেজে যে ভুয়ো টিকাকরণ ক্যাম্পের আয়োজক হিসেবে ইন্দ্রজিতের নাম উঠে আসায় এবার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.