Advertisement
Advertisement
Circus

বাঘ-সিংহের খেলা অতীত, কোভিড কালে পরোটার দোকান চালাচ্ছেন রিং মাস্টার

আলো‌ ঝলমল অ্যারেনার পুরনো স্মৃতিগুলোই ওঁদের সম্বল।

Once ring master in Circus is not paratha seller of Kolkata | Sangbad Pratidin
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:January 12, 2022 3:09 pm
  • Updated:January 12, 2022 3:09 pm  

নিরুফা খাতুন: বন্য শার্দুলকে হেলায় পোষ মানিয়ে ওঠবোস করাতেন ওঁরা। পশুরাজের পিঠে চড়ে চক্কর কাটতেন, সবাক বিস্ময়ে থম মেরে যেত দর্শকেরা। বাতাস কেটে যাওয়া চাবুকের সাঁই সপাৎ শব্দে ভয়াল চারপেয়েদের বশ মানানোর কেরামতি দেখে কখনও সহর্ষ করতালি, উল্লাসে ফেটে পড়ত তাঁবু।

থিকথিকে ভিড়ে ঠাসা সার্কাসের অ্যারেনায় আক্ষরিক অর্থেই বাঘ-ঘোড়াকে এক ঘাটে জল খাওয়ানো সেই রিং মাস্টারদের কথা হচ্ছে। একটা সময় ছিল, যখন শীতকাল মানেই সার্কাসের আসর, সার্কাস মানেই বাঘ-সিংহ, আর বাঘ-সিংহ মানেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ রিংমাস্টারের সদর্প উপস্থিতি। যাঁর আস্ফালনের সামনে জাঁদরেল রয়্যাল বেঙ্গল মেনি বেড়ালটি হয়ে যায়, সার দিয়ে টুলে বসে থাকে বাধ্য ছাত্রছাত্রীদের মতো, হুকুম হলে আগুনের বলয়ের ভিতর দিয়ে লাফ দেয়। দর্শকের কাছে রিং মাস্টাররা সাক্ষাৎ অতিমানব।

Advertisement

[আরও পড়ুন: জানুয়ারিতেই বাজারে আসছে LIC’র শেয়ার! দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যেই]

কিন্তু সার্কাসে বন্যজন্তু নিষিদ্ধ হওয়া ইস্তক তাঁদের দিন গিয়েছে। তার উপর কোভিডের (COVID-19) ক্রান্তিকালে সার্কাস ব্যবসাই মহা সংকটে। ফলে ‘অতিমানবেরা’ এখন পেট চালানোর জন্য অন্য পেশা আঁকড়ে ধরছেন। কেউ চিলতে দোকান খুলে, কেউ দেহাতে খেতি করে কায়ক্লেশে দিন গুজরানের চেষ্টায় ব্যস্ত। বস্তুতই তাঁরা এক একজন যেন অস্তাচলে যাওয়া এক ঐতিহ্যের জীবন্ত খণ্ডহর। যেমন কলকাতার পিকনিক গার্ডেনের নিত্যানন্দ পাণ্ডে। অলিম্পিক সার্কাসের একদা এই পরাক্রান্ত রিং মাস্টার এখন এলাকায় পরোটার দোকান খুলেছেন। পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা নিত্যানন্দ পাণ্ডে। বছর পঁয়তাল্লিশের নিত্যানন্দ প্রায় তেরো বছর অলিম্পিক সার্কাসে ছিলেন, হিংস্র বাঘ-সিংহদের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করেছেন। পরে পাখি, কুকুর নিয়ে রিংয়ে নামতেন। শেষমেশ‌ রিঙের মায়া কাটিয়ে পরোটার দোকানদার। সুখস্মৃতি অহরহ ঝিলিক মারে। ‘‘সীতা, দীপু, রাম, লক্ষ্মণ। বাঘগুলো আত্মীয় হয়ে গিয়েছিল। সীতাকে তো মা ডাকতাম।’’ পরোটা বেচতে বেচতে মেদুর স্বরে বলে চলেন নিত্যানন্দ, ‘‘একবার হাওড়া ময়দানে একটা বাঘ একটি মেয়েকে কামড়ে দিয়েছিল। আমার আগের রিং মাস্টারের থেকে শুনেছিলাম। কিন্তু ভয় পাইনি। শাসনের সঙ্গে ভালবাসার ভাষা ওরা দারুণ বোঝে।’’ আক্ষেপ করেন, “কী সব দিন ছিল! দুপুর থেকে শো শুরু,‌ সকালে উঠে বাঘ, সিংহ, হাতি, ঘোড়াদের নিয়ে ট্রেনিং। রিংয়ে নামতেই হাততালি, চিৎকার। ভেবেছিলাম, এভাবেই কাটবে। হল কই?”

স্ত্রী ও এক ছেলের সংসার চালাতে অগত্যা পরোটা বিক্রি। একই হাল আব্দুর রহমানের। প্রায় চল্লিশ বছর সার্কাসে কাটিয়েছেন। দু’বছর আগে লকডাউনে সার্কাস ঝাঁপ ফেলার পর পঁচাত্তর বছরের রিং মাস্টারের (Ring Master) রুজি-রুটির উৎস বিহারে গ্রামের বাড়িতে চাষবাস। ফেমাস সার্কাসের রিংয়ে যাঁর ক্যারিশমায় হাজারো মানুষ‌মোহিত হতো, তাঁর হাতে এখন চাবুকের বদলে লাঙ্গল, কোদাল‌। জানালেন, বাঘ, সিংহ, হাতি, জলহস্তী- সবই চরিয়েছেন দাপটে। একে একে সব চলে‌ যায়। শেষে‌ তিন বছর আগে হাতিকেও নিয়ে যাওয়া হয় সরকারি পশু আবাসে। “রিং মাস্টারের আর কী কাজ? কয়েক দিন গাড়ি নিয়ে স্টান্ট দেখিয়েছি। শেষে তো সার্কাসই বন্ধ হয়ে গেল। ফিরে গেলাম মধুবনীর দোশোয়ালিতে।” বিষণ্ণ স্বর ভারী হয়ে আসে বৃদ্ধের। আলো‌ ঝলমল অ্যারেনার পুরনো স্মৃতিগুলোই ওঁদের সম্বল।

[আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে চেনা ছবি উধাও গঙ্গাসাগরে, পুণ্যস্নানে ভিড় কম, মেলায়ও নেই জনসমাগম]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement