Advertisement
Advertisement
COVID-19

করোনাতঙ্কে ছুঁলেন না পরিজন ও পড়শিরা, ঘরের মেঝেয় ৬ ঘণ্টা পড়ে থেকে মৃত্যু অসুস্থ বৃদ্ধার

পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি বৃদ্ধাকে।

Old Woman dies at floor after 6 hours nobody helps her for cOVID-19 Scare

ছবি: প্রতীকী।

Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:July 26, 2020 8:46 pm
  • Updated:July 26, 2020 8:46 pm  

অর্ণব আইচ: ঘরের মধ্যে পড়ে অচৈতন্য বৃদ্ধা। তাঁর গোঙানি দেখে বোঝা যায় যে, শারীরিক কষ্ট পাচ্ছেন তিনি। ঘরের ভেতর উঁকি দিয়ে ওই অবস্থা দেখে বেরিয়ে এলেন তাঁর পরিজনরা। খবর গেল প্রতিবেশীদের কাছে। একে একে অনেকেই উঁকি মারলেন ঘরে। কিন্তু সেই করোনার আতঙ্ক। মুহূর্তের মধ্যে পাড়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ল, বৃদ্ধার করোনা হয়েছে। খবর পেয়ে এলেন না চিকিৎসকও, এমন দাবি পরিবারের। সকাল থেকে প্রায় বিকেল পর্যন্ত কেউ বৃদ্ধাকে তুললেন না। ওই অবস্থায় ঘরের মধ্যে মেঝেয় পড়ে রইলেন তিনি। প্রায় ৬ ঘন্টা পর খবর পেয়ে শেষে উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে বৃদ্ধাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটল শ্যামপুকুরের বৃন্দাবন পাল লেনে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই বৃদ্ধার নাম ছায়া চট্টোপাধ্যায় (৭০)। বৃন্দাবন পাল লেনের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। তাঁর স্বামী অনুপ চট্টোপাধ্যায় আগেই মারা গিয়েছেন। পাশের ঘরেই তাঁর দেওর পরিবার নিয়ে থাকেন। কয়েকদিন আগে পড়ে গিয়ে তিনি পায়ে আঘাত পান। সেখান থেকে তাঁর পায়ে ঘা হয়ে যায়। তার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন বৃদ্ধা। রবিবার সকালে তাঁর বাড়িওয়ালার পুত্রবধূ বাজারে যাওয়ার সময় দেখেন, দরজার কাছে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। বাজার থেকে ফিরে আসার পর দরজার বাইরে পায়ের অংশ দেখতে পেয়ে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি গিয়ে দেখেন, দরজার চৌকাঠের কাছেই মেঝেয় পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধা। তাঁর পা বেরিয়ে রয়েছে দরজার বাইরে। তিনি বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধার দেওরকে জানান।

Advertisement

[আরও পড়ুন: লকডাউনের আবহে সবজি বাজারে আগুন, মাথায় হাত মধ্যবিত্তের]

পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, বউদির সঙ্গে দেওরের পরিবারের সম্পর্ক খুব একটা ভাল ছিল না। তাই পাশের ঘরে পরিজন থাকা সত্ত্বেও একাকী ছিলেন তিনি। সকাল সাড়ে নটা নাগাদ বউদিকে ওইভাবে পড়ে থাকতে দেখেন দেওর। বৃদ্ধা গোঙাচ্ছিলেন। তিনি নিজে গিয়েও বউদিকে ছোঁননি। দেওরের দাবি, তিনি এক চিকিৎসককে ফোন করেছিলেন। কিন্তু এভাবে বৃদ্ধা পড়ে রয়েছেন, তা জেনে চিকিৎসক করোনার ভয়ে আসেননি। যদিও এই তথ্য পুলিশ যাচাই করছে। এর পরই ওই ব্যক্তি বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে প্রতিবেশীদের ঘটনাটি জানান। একে একে কয়েকজন প্রতিবেশী আসেন। ঘরের বাইরে থেকে উঁকি মেরে দেখে চলে যান। জানা গিয়েছে, তখনও বৃদ্ধা বেঁচে ছিলেন। কিন্তু করোনার আতঙ্কে কেউ তাঁকে তোলার সাহসটুকু দেখাননি।

পুলিশের দাবি, ওই অবস্থায় যদি বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অথবা পুলিশকে খবর দেওয়াও হত, তাহলে বৃদ্ধা হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেন। কিন্তু এভাবে সকাল থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত পড়ে ছিলেন বৃদ্ধা। কেউ তাঁর মুখে সামান্য জল দেওয়ার জন্যও এগিয়ে আসেননি। এক প্রতিবেশী পুলিশকে জানিয়েছেন, যেহেতু ওই অঞ্চলে কয়েকজন বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাই আতঙ্কে তাকে কেউ ছুঁতে চাননি। কিন্তু পুলিশ বা পুরসভাকে তা জানাননি কেন, সেই উত্তর দিতে পারেননি পরিজন অথবা অন্য প্রতিবেশীরাও।

[আরও পড়ুন: কোভিড রোগীদের পাশে দাঁড়াতে নয়া উদ্যোগ, করোনাজয়ীদের নিয়ে কলকাতায় চালু কল সেন্টার]

পুলিশের এক আধিকারিক জানান, শ্যামপুকুর থানায় বিকেল তিনটে নাগাদ খবরটি আসে। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা লালবাজারকে জানান। লালবাজার অ্যাম্বুল্যান্সে পাঠায়। তখন শ্যামপুকুর থানায় পিপিই ছিল না। এই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ভাবার সময়ও পায়নি। পুলিশ অফিসাররা গ্লাভস আর মাস্ক পরেই স্ট্রেচারে করে ওই বৃদ্ধাকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলেন। তখন তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এক পুলিশ অফিসার জানান, বৃদ্ধার আদৌ করোনা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এই বিষয়ে বৃদ্ধার প্রতিবেশী ও পরিজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement