গোবিন্দ রায়: পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিত্যহি পরমং তপঃ, পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতাঃ। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই আপ্তবাক্য ভুলে গিয়ে সন্তান যদি পিতা-মাতার পীড়ক হয়ে ওঠে, তখন আইনের হস্তক্ষেপ ছাড়া গতি কী? তাই ছেলে-বউমার অত্যাচারে সংসারচ্যুত বৃদ্ধকে ঘরে ফিরিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। শুধু তাই নয়, বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার কড়া নির্দেশ, এর পরে ছেলে-বউমা বৃদ্ধের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ করবে, প্রয়োজনে দম্পতিকে গারদে পুরবে। এবং জামিন পেয়ে গেলেও তারা যাতে ওই আবাসনে আর পা রাখতে না পারে, পুলিশকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণে পিতৃপ্রণামের মন্ত্রটির উল্লেখ করে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাই শ্রেষ্ঠ তপস্যা। পিতা সন্তুষ্ট হলে দেবতারাও সন্তুষ্ট হন। কিন্তু সন্তান যখন শৈশবের কঠিন বাস্তব বিস্মৃত হয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিকৃষ্ট ব্যাবহার করে, তখন সমাজের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকেই আদালতকে এগিয়ে আসতে হয়। হস্তক্ষেপ করতে হয়।’’
দক্ষিণ কলকাতার বেহালার পর্ণশ্রী থানা এলাকার বাসিন্দা, বছর বাষট্টির মৃণালকান্তি নাথ পেশায় ট্যাক্সিচালক। ছেলে অভিষেক ব্যবসায়ী, তাঁর স্ত্রী রুম্পা। মামলাকারীর কৌঁসুলি সৌম্যশুভ্র রায় জানিয়েছেন, গত বছর তাঁর মক্কেলকে পুত্র-পুত্রবধূর অত্যাচারে একাধিকবার ঘরছাড়া হতে হয়। গত ডিসেম্বরে নিজের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
দু’বছর আগে মৃণালবাবুর স্ত্রীবিয়োগ হয়েছে। চার কাঠা জমিতে নিজস্ব বাড়ি ছিল, ছেলের পরামর্শে বাড়ি ভেঙে ২০২১ সালে ফ্ল্যাট তৈরি হয়। নতুন ফ্ল্যাটে ছেলে-বউমার সঙ্গে বসবাস শুরু করার পরেই হেনস্তার শুরু। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘ছেলে-বউমা বলে, ওদের সঙ্গে থাকা নাকি আমার মানায় না!’’
তাই ওঁকে বারবার বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মৃণালবাবু একাধিক বার পর্ণশ্রী থানায় নালিশ করেন, প্রতিবার পুলিশ গিয়ে তাঁকে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে আসে। তবে পীড়নের পালায় দাঁড়ি পড়েনি। বাধ্য হয়ে আদালতের এসেছেন প্রতিকার চাইতে। সওয়ালে সৌম্যশুভ্রবাবুর প্রশ্ন, ‘‘আদালত স্থায়ী কোনও সুরাহা করুক। বাড়ি ছেড়ে উনি কোথায় যাবেন?’’ আদালতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, প্রশাসন বরাবর বৃদ্ধের পাশে দাঁড়িয়েছে। আদালত যা নির্দেশ দেবে, পুলিশ সেই মতো ব্যবস্থা নেবে। শুনানিতে অভিষেক-রুম্পার তরফে কোনও আইনজীবী ছিল না। হাই কোর্টের নির্দেশে বাড়ি ফিরেছেন মৃণালবাবু। আইনের ভূমিকায় তিনি সন্তুষ্ট। ‘‘যার কেউ নেই, আদালতই তার ভরসা।’’ বলছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.