Advertisement
Advertisement
COVID-19

নাক দিয়ে ভাইরাস ঢুকে কাবু করেছে মস্তিষ্ক! করোনার আঘাতে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ

চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে গুলিনবারি সিন্ড্রোম।

Old Man victim of Gulinbari Syndrom atlast won against COVID-19
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:August 15, 2020 4:45 pm
  • Updated:August 15, 2020 4:45 pm  

অভিরূপ দাস: একা রামে রক্ষা নেই তায় সুগ্রীব দোসর! দু’পায়ে বাসা বেঁধেছিল দুর্বলতা। সেখান থেকে আচমকাই পক্ষাঘাত গ্রস্ত। উঠে দাঁড়ানোরও ক্ষমতা ছিল না। উত্তর কলকাতার বছর চুয়াত্তরের নারায়ণ দত্ত ভরতি হয়েছিলেন পার্ক স্ট্রিটের ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সে। স্নায়ুরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. হৃষিকেশ কুমার রোগীকে জরিপ করে জানতে পারেন দুরারোধ্য ব্যধি আঁকড়ে ধরেছে বৃদ্ধকে। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলে গুলিনবারি সিন্ড্রোম। পেরিফেরিয়াল নার্ভ জখম হয়ে ক্রমশ অসার হওয়ার পথে বৃদ্ধের শরীর। বৃদ্ধের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় পরিবারে কোনও স্নায়ুরোগের ইতিহাস নেই। সূত্র ছিল একটাই। যেদিন থেকে হাঁটা চলার ক্ষমতা হারিয়েছেন নারায়ণবাবু, অল্পেতেই তাঁর হাঁফ ধরছে। তড়িঘড়ি বুকের সিটিস্ক্যান করাতেই ধরা পরে যায় সত্যিটা। করোনা বাসা বেঁধেছে ফুসফুসে।

করোনা থেকে পঙ্গুত্ব? নিউরোসায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. রবীন সেনগুপ্ত জানিয়েছেন কোভিড থেকে স্নায়ুর বড়সড় অসুখ হচ্ছে। এ মরশুমেই এমন তিনজন রোগী পেয়েছে ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স। মস্তিষ্কের ভেতরে ক্যাপিলারিতে কিছু বিশেষ কোষ থাকে। যা যেকোনও ভয়ঙ্কর সংক্রমণ থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। এর নাম ব্লাড ব্রেইন বেরিয়ার। করোনা ভাইরাসে শরীরে আক্রমণ হানলে সংক্রামক লিউকোসাইট এই ব্যারিয়ারকে ভেঙে দিচ্ছে। যার ফলে উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে মস্তিষ্ক। শুধু তাই নয়, করোনায় এনসোমনিয়া বা ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়ার জন্য দায়ী ভাইরাস। নাকের ভিতরের নার্ভের সঙ্গে মস্তিষ্কের সরাসরি যোগাযোগ। যে কারণে চেনা গন্ধ পেলেই আমরা বুঝতে পারি জিনিসটা কী।

Advertisement

[আরও পড়ুন: লালবাজারেও করোনার থাবা, আক্রান্ত কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার]

ভাইরাস নাক দিয়ে প্রবেশ করে সরাসরি মস্তিষ্কে আঘাত হানছে। জখম স্নায়ু হাজারও অসুখের শুরু করছে। কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করছে না নিউরোসায়েন্স। কিন্তু সেখানে এমন তিন দুরারোগ্য স্নায়ুর অসুখের রোগী এসেছেন করোনা যাঁদের বাঁচার আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। দেখা গিয়েছে গড়ে ন’জন করোনা আক্রান্ত হলে তার মধ্যে তিনজনের শরীরে বাসা বাধছে স্নায়ুর অসুখ। যেমনটা হয়েছিল নারায়ণ দত্তর শরীরেও। নাক দিয়ে করোনা প্রবেশ করে তার পেরিফেরিয়াল নার্ভের বাইরের আচ্ছাদনে আঘাত করে। তারপর থেকেই হাটাচলা করতে পারছিলেন না। গুলিনবারিতে যত দিন যেতে থাকে রোগী ক্রমশ স্থবির হয়ে পরে। এখানেও তাই। হাঁটাচলার পর শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন নারায়ণবাবু। ঠাই হয় ভেন্টিলেশনে। টানা ২০ দিন কোমায় ছিলেন রোগী। ভয় ছিল আরও। রক্তকে অত্যন্ত ঘন করে দিচ্ছে করোনা। ঘন রক্ত যেখানে সেখানে জমাট বেধে যাচ্ছে। তা মস্তিষ্কে জমাট বাধলেই স্ট্রোক হতে বাধ্য।

ডা. হৃষিকেশ কুমারের কথায়, সেদিকে আমাদের নজর ছিল। শরীরের স্নায়ুতন্ত্র গাছের ডালপালার মতো। মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে নার্ভ ডালপালার মতো ছড়িয়ে রয়েছে। এই পেরিফেরিয়াল নার্ভ মস্তিষ্ক থেকে বিভিন্ন অঙ্গে বার্তা পাঠায়। স্বাভাবিক ভাবেই যে ভাইরাস গন্ধ চিনে জিনিস বোঝার ক্ষমতা কাড়ছে সে এই নার্ভকেই আগে আঘাত করবে। টানা ২০ দিন অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ছিল রোগী। অ্যান্টিবডি ডেফিসিয়েন্সি মেটানোয় ছিল আসল কাজ। করোনা চিকিৎসার পাশাপাশি ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিন ইঞ্জেকশন দেওয়া হতে থাকে রোগীকে। টানা কুড়ি দিন পর ভেন্টিলেশন থেকে বেরলেও দুর্বলতা ছিল মারাত্মক। আইভিআইজি চিকিৎসায় রোগীর প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

[আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য কমিশন হস্তক্ষেপ করতেই করোনায় মৃত চিকিৎসকের বিল সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা কমাল মেডিকা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement