সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যাদবপুর কাণ্ডের ছায়া বারাসতে। রাস্তার উপর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করলেন এক বৃদ্ধ৷ শনিবার ভোরে বারাসতের সরোজ পার্কের রাজা রামমোহন পল্লির রাস্তায় দাউ দাউ করে জ্বললেন ওই বৃদ্ধ৷ কেউ এসে আগুন নিভিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেননি তাঁকে৷ পরিবারের লোক যখন জানতে পারেন ততক্ষণে সব শেষ৷ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছেন শান্তিরঞ্জন বিশ্বাস (৬৫)৷
কেউ কি দেখেননি ওই বৃকে জ্বলতে? আশপাশের বাড়ি, প্রাতঃভ্রমণকারী, পথচলতি মানুষ৷ মানুষের দেহ পোড়ার গন্ধ তো ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা এলাকায়৷ কেউ কি টের পেলেন না, বাড়ির সামনেই আগুনে পুড়ছেন এক জলজ্যান্ত মানুষ? ঠিক একইভাবে প্রায় এক সপ্তাহ আগে যাদবপুরের বিজয়গড়ের নেতাজি শিশু উদ্যানের ভিতর এক বৃদ্ধাকে জ্বলতে দেখেও এগিয়ে আসননি কেউ৷ এদিনও মুখ ফিরিয়ে নিলেন এলাকার মানুষ৷ কী ‘অমানবিক’!
এদিন ভোর হতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন শান্তিরঞ্জনবাবু৷ ছেলে ঘুম থেকে উঠে বাবাকে বাড়িতে না পেয়ে এলাকায় খুঁজতে বের হন৷ তখন জানতে পারেন পাড়ায় রাস্তায় একজন গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷ ছুটে বাড়িতে গিয়ে তিনি দেখেন কেরোসিন তেলের ড্রামটি ঘরে নেই৷ আশঙ্কা করেন তাঁর বাবাই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন৷ ঘরের থেকে একটি ডায়েরিতে লেখা সুইসাইড নোট খুঁজে পান শান্তিরঞ্জনবাবুর ছেলে৷ তার থেকে আশঙ্কা আরও জোরালো হয়৷ দেহ দেখে চেনার উপায় ছিল না৷ পরনের জামা প্যাণ্টের পুড়ে যাওয়া অংশ দেখে অবশেষে বাবাকে শনাক্ত করেন তিনি৷ মৃতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন শান্তিরঞ্জনবাবু৷ ডায়ালিসিস চলছিল তাঁর৷ রোগের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অবসাদে ভুগছিলেন তিনি৷ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগেও একবার ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি৷ তবে পরিবারের লোকে দেখে ফেলায় সে চেষ্টা বিফল হয়ে যায়৷
স্থানীয় কাউন্সিলর রঞ্জিত দাস জানিয়েছেন, “শান্তিবাবুর ছেলে আমার কাছে সাড়ে ছ’টা নাগাদ এসে ঘটনার কথা জানায়৷ আমি সঙ্গে সঙ্গে বারাসত থানায় খবর দিয়ে ঘটনাস্থলে যাই৷” বারাসত থানার পুলিশ দেহটি উার করে৷ ঘটনাস্থল থেকে একটি খালি কেরোসিনের ড্রামও উদ্ধার হয়৷ দেহটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে৷ সুইসাইড নোটটি শান্তিরঞ্জনবাবুর লেখা কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ তবে পুলিশ আসার পর এলাকায় তিল ফেলার জায়গা ছিল না৷ বৃদ্ধকে জ্বলতে দেখেও যাঁরা এগিয়ে আসেননি, পরে সেই এলাকার মানুষের ভিড়েই উপচে পড়ে এলাকা৷ সবার একটাই বক্তব্য, কেউ জানে না কখন, কীভাবে হল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.