কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে যখন পুলিশকে ডাকছিলেন এক প্রবীণ, তখন স্বাভাবিকভাবে ভাবা হয়েছিল যে তাঁর নিজের বুঝি কোনও প্রয়োজন। হয়ত কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের দিয়ে বাড়ির প্রয়োজনীয় কোনও জিনিস আনিয়ে নেবেন। লকডাউনের দিনগুলোয় বাজার যেতে না পেরে হয়ত পুলিশেরই দ্বারস্থ হতে চাইছেন। কিন্তু সামনে যেতেই পুলিশের সেই ভাবনা ভুল প্রতিপন্ন হল। কাঁপা কাঁপা গলায় বৃদ্ধ তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, “এসময় যারা খেতে পাচ্ছেন না, তাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি?”
বৃদ্ধের মুখে এই প্রশ্ন শুনে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যান পুলিশকর্মীরা। কারণ, তাঁদের চিরাচরিত ভাবনা যে ভেঙে গেল! সম্বিত ফিরে পেয়ে পুলিশ তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের কথা জানান। বলা হয় যে ওই তহবিলে অর্থদান করেই তিনি সাহায্য করতে পারেন। এরপর বৃদ্ধ এক মিনিটের মধ্যে একটি চেক কেটে তুলে দেন সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকের হাতে। জানান যে অভুক্তদের খাবার দেওয়ার কাজে তিনি চেকটি দান করলেন। চেকে টাকার অঙ্ক লেখা – ১০ হাজার। তা হাতে পেয়ে আপ্লুত ওই আধিকারিক। সাহায্যপ্রার্থী নন, এই প্রবীণ তো সাহায্যকারী। এটাই চমকে দিয়েছে সাধারণ নাগরিকের সুবিধা প্রদানে হাত বাড়িয়ে দেওয়া পুলিশকর্মী, আধিকারিকদের।
এই ঘটনা বিমানবন্দর থানা এলাকার অন্তর্গত বিরাটির মহারাজা নন্দকুমার রোডের। জানা যায়, সাহায্যকারী বৃদ্ধের নাম সুভাষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, বয়স ৮২ বছর। তিনি বনগাঁর দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৯৮ সালে অবসর নেন।শেষ জীবনে পেনশনের টাকাটুকুই সম্বল। তবু নিজের সাধ্যমতো তিনি হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই সময়ে বিপন্নদের দিকে। লকডাউনের এই সময় পুলিশ প্রবীণদের পাশে দাঁড়িয়ে নানাভাবে সাহায্য করছে। কাউকে ওষুধ, কাউকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কিন্তু বিরাটির সুভাষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যতিক্রম। সাহায্য চাওয়া তো দূর অস্ত, নিজের জীবনের সঞ্চয় থেকে টাকা দিচ্ছেন পীড়িত মানুষের জন্য! ঘটনা চমকপ্রদ তো বটেই, তার চেয়েও বেশি বোধহয় শিক্ষণীয়। এই সংকটে একজন আদর্শ মানুষের ভূমিকাই পালন করেছেন তিনি। শুধু মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক নন, এমন মানুষ গোটা সমাজেরই শিক্ষক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.