স্টাফ রিপোর্টার: নিখাদ বাংলায় মা-মা বলে ডেকেছিলেন রামকৃষ্ণ। ভবতারিণীর আশিস স্পর্শ করেছিল তাঁকে। শুদ্ধ মাতৃভাষায় দশভুজাকে সম্বোধনেও মিলবে কৃপা। অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি হোক মধুমাখা মায়ের ভাষায়। দুর্গাপুজোর ইতিহাসে প্রথম এমন আনকোরা টাটকা উদ্যোগ নিয়েছে সংবাদপ্রতিদিন ডট ইন পুষ্পাঞ্জলি। কালজয়ী সে উদ্যোগের স্লোগান, ‘মায়ের ভাষায় মায়ের পুজো।’
কলকাতার দেড়শো পুজো সায় দিয়েছে। এমন প্রস্তাবে সন্ধি করেছে দিল্লি, মুম্বই, পাটনা, বেঙ্গালুরু মধ্যপ্রদেশের একাধিক পুজো। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এমন নজিরহীন পরিকল্পনায় শামিল হচ্ছেন সিডনি, দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়ার পুজো উদ্যোক্তারা শুক্রবার এ-নিয়েই আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল তিলোত্তমার মহাজাতি সদনে। যেখানে শহরের একঝাঁক পুজোপাগল ছাড়াও হাজির ছিলেন পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। সংবাদ প্রতিদিনের প্রধান সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস, ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সম্পাদক শাশ্বত বসু, সভাপতি কাজল সরকার।
বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নার, বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি, চোরবাগান সর্বজনীন, বেহালা দেবদারু ফটক, বোসপুকুর শীতলামন্দির, বালিগঞ্জ কালচারালের মতো অগুনতি পুজোর কর্তারা এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। chantbangla.org ওয়েবসাইটে গেলেই মিলছে বাংলা ভাষায় লেখা মন্ত্রের পিডিএফ এবং অডিও ফাইল। মহাষ্টমীর এই পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রের বঙ্গানুবাদ করেছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, প্রবীণ পুরোহিত কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। ওয়েবসাইটে গিয়ে সেই ফাইল ডাউনলোড করেই শুরু করা যাবে অষ্টমীর অঞ্জলি। এদিনের অনুষ্ঠানে বাচিকশিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের পাঠ করা বঙ্গানুবাদ মন্ত্রটি শুনে মোহিত সকলে। প্রশ্ন ছিল একটাই। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আসা সংস্কৃত বন্ধ করলে দেবী কি কুপিত হবেন? এমন যুক্তি ঘিরে ডালপালা মেলল চর্চা।
পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী জানিয়েছেন, সমস্ত সংস্কৃত মন্ত্রের উৎপত্তি বৈদিক যুগে। মন্ত্র বলার নিয়ম মানতে গেলে তা তিনভাবে উচ্চারণ করতে হয়। উদাত্ত, অনুদাত্ত এবং স্বরিত। প্রতিটি পঙক্তিতে উচ্চারণের ধারা না মানলে ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী।
বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ মন্ত্র বলার সময় সেটা মানেন না। কুড়ি ব্যাচের অঞ্জলি দেওয়ানোর সময় পুরোহিতও খেয়াল করেন না। পুরাণবিদের মতে, উচ্চারণ থেকে যখন সরে আসা গিয়েছে, বাংলায় মন্ত্র উচ্চারণ করলে কোনও ক্ষতি নেই। উপমা এসেছে কালীসাধক রামপ্রসাদের। যিনি বলেছিলেন, চোখ বন্ধ করলেও মাকে দেখা যায়। অর্থাৎ ভাষা যা-ই হোক, হৃদয়ের শুদ্ধ আর্তিটাই আসল। বাংলায় বাইবেল পাওয়া যায় বইমেলায়, বইপাড়ায়। যিশুখ্রিস্ট কি বাংলা ভাষা বোঝেন? না কি বুঝতে হবে ব্রিটিশরা বোকা? নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর যুক্তি। আসলে কোনওটাই নয়। ঠাকুর শুধুমাত্র একটা ভাষা বোঝেন এটাই ভ্রান্ত ধারণা। আলোচনা শেষে সবপক্ষই একমত। চাপিয়ে দেওয়া নয়। গোঁড়ামি থেকে মুক্তকরণের পথে এগিয়ে যাক দুর্গাপুজোর অঞ্জলি। এবার না হয় বাংলা চলুক সংস্কৃতর হাত ধরে। এক লাইন সংস্কৃত মন্ত্রর সঙ্গে তার বাংলা মানে বুঝিয়ে দিন পুরোহিতরা। বিপ্লব শুরু হোক বাইশ থেকেই। এখনও যাঁরা এই উদ্য়োগে অংশ নেওয়ার কথা ভাবছেন, যোগাযোগ করতে পারেন ই-মেলে। ই-মেলের ঠিকানা [email protected]। তৈরি হয়েছে বাংলা মন্ত্রের একটি বই। এদিন তা তুলে দেওয়া হয় উদ্যোগে শামিল হওয়া পুজোকর্তাদের হাতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.