অর্ণব আইচ: নাগাল্যান্ডের ‘শান্তি বৈঠক’ কলকাতায়। সোম ও মঙ্গলবার দু’দফার বৈঠক ঘিরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। ডিমাপুর বা নাগাল্যান্ডের অন্য কোনও শহর ছেড়ে বৈঠক কলকাতায় কেন, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। তবে গোয়েন্দা মহলের খবর, যে সমস্যার সমাধান দিল্লি-সহ কোনও শহরেই হয়নি, তা হয়েছে কলকাতায়। যুদ্ধবিরতিতে থাকা একটি নাগা জঙ্গিগোষ্ঠী রাজি হয়েছে ‘কাউন্সিল ফর নাগা রিলেশনশিপ অ্যান্ড কোঅপারেশন’ তৈরি করে নাগাল্যান্ডে শান্তি ফেরানোয় সাহায্য করতে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবারই ডিমাপুর থেকে কলকাতায় এসে হাজির হন নাগাল্যান্ডের দু’টি গোষ্ঠীর নেতারা। দু’টির মধ্যে একটি সংগঠন হচ্ছে ‘ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড’ বা এনএসসিএন-এর ইশাক-মুইভা (NSCN-IM) গোষ্ঠী। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ‘যুদ্ধবিরতি’তে রয়েছে এনএসসিএন (আইএম)। অন্য গোষ্ঠীটি হচ্ছে সাতটি নাগা সংগঠনের যৌথমঞ্চ ‘নাগা ন্যাশনাল পলিটিক্যাল গ্রুপস’ (এনএনপিজি)। এর আগেও কখনও কেন্দ্রীয় সরকার আবার কখনও বা নাগাল্যান্ড সরকারের মধ্যস্থতায় ওই রাজ্যে শান্তি ফেরাতে বা শান্তি বজায় রাখতেই এনএসসিএন (আইএম) বৈঠক করেছে এনএনপিজি-র সঙ্গে। কিন্তু এনএসসিএন (আইএম)-এর দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। এমনকী, গত মাসেও দিল্লিতে বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি বলেই জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে, ‘যুদ্ধবিরতি’ চললেও কখনও বারুদে যদি আগুনের ফুলকি পড়ে, তবে তার ফল হতে পারে মারাত্মক। তাই দীপাবলির আগে ফের নাগাল্যান্ডের (Nagaland) পরিস্থিতি নিয়ে ‘শান্তি বৈঠকে’র সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রবিবার এনএসসিএন (আইএম) সংগঠনের টংমেথ ওয়াংনাও, জেমস মাও, ভি এস আটেম, টি টি আমোং সাংটাম-সহ ন’জন নেতা ও এনএনপিজি-র এন কিটোভি ঝিমোমি, ইসাক সুমি -সহ পাঁচজন নেতা ডিমাপুর থেকে কলকাতায় উপস্থিত হন। সোমবার সকাল থেকে নিউ টাউনের একটি হোটেলে বৈঠক হয়। সমাধানের সূত্র না বের হওয়ায় মঙ্গলবার শেক্সপিয়র সরণিতে নেতারা ফের বৈঠকে বসেন। শেষ পর্যন্ত এনএসসিএনের সহ-সভাপতি টংমেথ ওয়াংনাও ও এনএনপিজি-র এন কিটোভি ঝিমোমি যৌথভাবে নাগাল্যান্ডে মানুষের অধিকার ও শান্তিপ্রক্রিয়ার জন্য নতুন কাউন্সিল তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
উল্লেখ্য, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, অসম ও মায়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে নাগা স্বাধীনভূমি বা ‘গ্রেটার নাগালিম’ গড়ার ডাক বহুদিনের। এই দাবিতে অনেক দিন ধরেই জঙ্গি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন (NSCN)৷ সংগঠনটি বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর মুইভা গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে কেন্দ্র। ২০১৫ সালে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটির সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে মোদি সরকার। কিন্তু সমস্ত আলোচনা থমকে আছে সংগঠনটির দু’টি দাবির উপর। দাবিগুলি হচ্ছে, নাগাল্যান্ডের জন্য পৃথক পতাকা ও সংবিধান। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এর আগেও বৈঠকে কেউ ঐক্যমত হতে পারেনি। সেই কারণেই সরকারের মধ্যস্থতায় নাগা রাজনৈতিক সংগঠন এনএনপিজির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে এনএসসিএন (আইএম) গোষ্ঠীর। গত মাসে একই বিষয় নিয়ে ডিমাপুর ও দিল্লিতে বৈঠক হয়। দিল্লিতে সমাধান না হওয়ায় ফের সমতলেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে, নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর বা কোহিমা, অথবা উত্তর পূর্ব ভারতের কোনও শহরের বদলে বৈঠকের জন্য বেছে নেওয়া হয় কলকাতাকেই। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে গোয়েন্দাদের ধারণা, যাতে বৈঠক চলাকালীন কোনও সমস্যা বা হামলা না হয়, তার জন্য নিরাপদ একটি জায়গার প্রয়োজন ছিল। সবার ক্ষেত্রেই কলকাতা অত্যন্ত নিরাপদ জায়গা। এ ছাড়াও কলকাতা ও সল্টলেকে নাগাল্যান্ড সরকারের দু’টি ভবন রয়েছে। তবে কাউন্সিল গঠন অনেকটাই কার্যকর বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.