অর্ণব আইচ ও মণিশংকর চৌধুরী: জাতি দাঙ্গায় জ্বলছে মণিপুর। কুকি-মেতেই সংঘাতে উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি রাজ্যে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে আতঙ্ক। সরকার, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের প্রয়াসে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও ছাইচাপা আগুন ফের যে লেলিহান শিখায় পরিণত হবে না, সেই নিশ্চয়তা নেই। এহেন পরিস্থিতিতে মণিপুরে শান্তি ফেরাতে লোকচক্ষুর আড়ালে কলকাতার নাগাল্যান্ড হাউসে হয়ে গিয়েছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক।
সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে সল্টলেকের নাগাল্যান্ড হাউসে যুযুধান মেতেই ও কুকি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই শান্তি আলোচনার পৌরহিত্যে ছিল নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন এনএসসিএন-আইএম (NSCM-IM)। সংগঠনের তরফে হাজির ছিলেন উংমাতেম ভাশুম। বলে রাখা ভাল, ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নাগা পিস অ্যাকর্ড (নাগা শান্তিচুক্তি) সংক্রান্ত আলোচনায় এনএসসিএনের প্রতিনিধি দলে ছিলেন ভাশুম। কেন্দ্রের নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারী আর এন রবির সঙ্গে একাধিক আলোচনায় শামিল হয়েছিলেন তিনি। ফলে এহেন হাই-প্রোফাইল এনএসসিএন নেতার কলকাতা আগমন যে রুটিন আলোচনা নয় তা স্পষ্ট।
উল্লেখ্য, মণিপুরে বরাবরই টাংখুল নাগাদের বাস। তাদের মধ্যে এনএসসিএনের প্রভাব যথেষ্ট। বিশেষ করে মণিপুর-মায়ানমার সীমান্ত যেন সার্বভৌম অঞ্চল। সেখানে ড্রাগ কার্টেল থেকে শুরু করে কুকি ও নাগা জঙ্গি সংগঠনগুলির রাজত্ব চলে। তবে ২০১৫ সালে কেন্দ্রের মোদি সরকারর সঙ্গে শান্তিচুক্তি সই করার পর থেকেই অনেকটা সংযত এনএসসিএন। কিন্তু মণিপুরের সাম্প্রতিক হিংসায় মেতেই ও কুকিদের সঙ্গে নাগারাও জড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি ঘোরাল হয়ে উঠেছে। এর আঁচ দ্রুত নাগাল্যান্ডেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে সংগঠনটির উপর চাপ বাড়িয়েছে দিল্লি। তাই এবার মণিপুরে (Manipur) শান্তি ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে এনএসসিএন।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে থেকেই মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেতেই জনজাতির সঙ্গে রক্তাক্ত সংঘাত চলছে কুকি-ঝোমি ও অন্য আদিবাসীদের। এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন পঞ্চাশ জনেরও বেশি মানুষ। ট্রাইবাল বা আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই নতুন কিছু নয়। কয়েকশো বছর ধরে তা চলছে। তবে এবার তা ভিন্ন মাত্রা ধারণ করেছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেতেইরা তফসিলি উপজাতির তকমা দাবি করে বারুদের স্তূপে আগুন দিয়েছে।গত এপ্রিল মাসে রাজ্য সরকারকে মেতেইদের দাবি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এর ফলে, কুকি-ঝাোমি ও টাংখুল নাগাদের মতো রাজ্যের সংখ্যালঘু আদিবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে। আবার অনেকের ধারণা, নিজের রাজ্যে জমি বারাতে বসেছে মেতেইরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.