স্টাফ রিপোর্টার: একি কাণ্ড? জিভের মধ্যে ঘন কালো চুল! গোটা জিভটাই যে কালো রোমশ চুলে ঢাকা!
কোনও মনগড়া গল্প নয়। সোদপুরের বছর ষাটেকের অরূপ সরকার( নাম পরিবর্তিত) এমন অদ্ভুত সমস্যা নিয়ে হাজির শিয়ালদহ লাগোয়া এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (NRS Medical College & Hospital) ইএনটি বিভাগে।
প্রথমে টিকিট কেটে আউটডোর। কিন্তু আউটডোরে জুনিয়র চিকিৎসক বিষয়টি দেখেই চক্ষু চড়কগাছ। গোটা জিভটাই তো কালো রোমশ চুলে ডাকা। ‘অপেক্ষা করুন’ বলে ডেকে আনলেন আরেক বিশেষজ্ঞকে। সবটা দেখে তাঁর মনে হল, মেডিক্যাল সায়েন্সে পরিচিত রোগ। তবে খুব একটা দেখা যায় না। গোটা কয়েক অ্যান্টিবায়োটিক আর প্রচুর জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে রোগীকে বাড়ি পাঠালেন। শুরু হল নতুন করে পড়াশোনা। ক্রমশ গোটা বিষয়টি সামনে এল রোগের নাম ‘ব্ল্যাক হেয়ারি টাং’ (Black Hairy Tongue)।
কেস হিস্ট্রি নিয়ে জানা গেল, ওই বৃদ্ধ গলার ক্যানসারে ভুগছিলেন। ক্যানসার মুক্ত হওয়ার জন্য রে দেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই শক্ত খাবার খেতে পারছিলেন না অনেকদিন। বস্তুত, বেঁচে থাকার জন্য তরল খাবার খেতে হয়েছে তাঁকে। জিভও নিয়মিত পরিষ্কার হয়নি। ফলে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়েছে।
অধ্যাপক চিকিৎসক প্রণবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আসলে জিভে কখনও চুল গজায় না। জিভের মধ্যে তিন ধরণের প্যাপিলা থাকে। এগুলোর মধ্যে একটির নাম সিলির্ফম প্যাপিলা, দ্বিতীয়টি ফাঙ্গিফর্ম প্যাপিলা এবং তিন নম্বর সারকামভেলি প্যাপিলা। প্যাপিলার কাজ জিভকে পিচ্ছিল রাখা। কোনও কারণে যদি রোগের চরিত্র বদলে যায়। ধরুন ক্যানসারের রোগীকে রেডিয়েশন দেওয়ার পর সেই পিচ্ছিলভাব অত্যন্ত কমতে থাকে। অথবা রোগীর মুখ দিয়ে খাবার না যায় তাহলে এমনটা হতে পারে।
তাহলে উপায়? ডা প্রণবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়,“জিভের মধ্যে যদি খুব বেশি এমন কালো চুলের মতো প্যাপিলা দেখা যায়, সেক্ষেত্রে রোগীকে বেশি করে জল খেতে বলা হয়। বলা হয় বারবার কুলকুচি করতে।” প্রণবাশীষ বাবুর কথায়, নিয়ম মেনে চললে ৪-৮ সপ্তাহের মধ্যে রোগমুক্তি হয়। একই অভিমত এসএসকেএম হাসপাতালের ইএনটি’র বিভাগীয় প্রধাণ অধ্যাপক ডা অরুণাভ সেনগুপ্তের। অরুণাভবাবুর কথায়, “এমন রোগী খুব একটা দেখা যায় না। মেরেকেটে হাজারে একজন বা তারও কম। ওই প্যাপিলা লাগামছাড়া বেড়ে গেলে এমনটা হতে পারে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.