অভিরূপ দাস: একটা ঘটনা। প্লেট থেকে বাদ গেল মাটন কারি। চিকেন কাটলেট। কুকুর নিধন মনে ছাপ ফেলেছিল তাঁরও। সমবেদনা জানাতে তাই আমিষ খাওয়াই ছেড়ে দিলেন এনআরএস হাসপাতালের ডেপুটি সুপার দ্বৈপায়ন বিশ্বাস। নিজেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে জানিয়েছেন সেকথা। লিখেছেন, ‘ষোলোটি কুকুরছানার নৃশংস মৃত্যুর পর আমিষ খাওয়া ছেড়ে দিলাম।’ কারণ অনেকেই এর সঙ্গে পশু মেরে মাংস খাওয়ারও তুলনা করছেন।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ষোলোটি কুকুরছানার মৃত্যুর খবর সংবাদের শিরোনামে আসতেই ধিক্কার উঠেছিল সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে। অনেকেই আবার এই ঘটনায় সংবেদনশীল মানুষের দিকে অন্য প্রশ্ন তোলেন, “পশুপাখি মেরে মাংস খাচ্ছেন। অথচ নিজেদের পশুপ্রেমী বলছেন। এ কেমন দ্বিচারিতা?” এই প্রশ্নই হাসপাতালের ডেপুটি সুপারের মনে ছাপ ফেলেছিল। এমনিতেও নিজের বাড়িতে পোষ্য রয়েছে তাঁর। পশুপ্রেমীদের সংগঠন ‘পেটা’-ও মূলত নিরামিষ খাবার খাওয়ার চিন্তাকেই ছড়িয়ে দিতে চায়। সেই চিন্তার সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দ্বৈপায়ন বিশ্বাস বুঝিয়ে দিলেন, স্রেফ নামে নয়, কাজেও পশুপ্রেমী হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে চান তিনি। এদিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এই পোস্ট করতে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন ডেপুটি সুপারের এই সিদ্ধান্তকে। ছাত্ররা লিখেছে, “আপনার মন আর মুখ এক, এটাই তার প্রমাণ।” যদিও এই ঘটনাকে বড় করে দেখতে নারাজ ডেপুটি সুপার নিজে। বরং তিনি বলছেন, “কুকুর নিধনের ঘটনা অত্যন্ত নৃশংস। সারমেয় রক্ষায় যাঁরা আওয়াজ তুলছেন অন্যান্য প্রাণীর প্রতি চুপ করে থাকাটা তাদের পক্ষে দ্বিচারিতা হয়ে যাবে। সবদিক দিয়ে ভেবে দেখলাম আমিষ খাবার দৈনন্দিন মেনু থেকে বাদ দিলে কোনও অসুবিধা হবে না। বরং নিজেকে পশুপ্রেমী বললে সেটা করাই সমীচীন হবে।’
এদিকে সোমবার সন্ধেয় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। এনআরএস কুকুরছানা হত্যাকাণ্ডে জামিন পাওয়ার পর অভিযুক্ত দুই নার্সিং পড়ুয়া ক্লাসে যোগ দিয়েছেন। এই অভিযোগে হাসপাতালে চত্বরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পশুপ্রেমীরা। পশুপ্রেমীদের পক্ষ থেকে তথাগত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমরা খবর পেয়েছি ওই দু’জন নার্স আবার ক্লাসে করেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা দিয়েছিল ওই দু’জনকে হাসপাতাল চত্বরে কোনওমতেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। যতদিন না ওই দু’জনকে বহিষ্কার করা হচ্ছে ততদিন আন্দোলন চলতে থাকবে।” ডেপুটি সুপার দ্বৈপায়ন বিশ্বাস জানিয়েছেন, নার্সিংয়ের দুই ছাত্রীকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। একমাত্র নার্সিং কাউন্সিলের সেই ক্ষমতা রয়েছে। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাই হবে। নার্সিং কাউন্সিলেও বহিষ্কারের দাবি নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথাগত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.