গৌতম ব্রহ্ম: সকাল থেকেই মুখ গোমড়া করে ছিলেন। কিছুই মুখে তুলছিলেন না বেহালার দ্বিজেনবাবু। সাতদিন ধরে কলকাতার এনআরএস (NRS) হাসপাতালের কোভিড (CoronaVirus) ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। কিন্তু বাড়ির কেউ একবারের জন্যও দেখা করতে আসেনি। খোঁজও নেয়নি। অভিমানে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন সত্তরের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া বৃদ্ধ। পণ করেছিলেন, বাড়ির কেউ দেখা করতে না এলে মুখে কুটোটিও কাটবেন না। ৬৯ বছরের করোনা আক্রান্ত ‘দাদু’কে নিয়ে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল NRS কর্তৃপক্ষের। এই অবস্থায় খাওয়াতে না পারলে যে বিপদ! তার উপরে দ্বিজেনবাবুর গ্যাসট্রাইটিসের প্রবল সমস্যা। মলের সঙ্গে রক্তপাত হয়। এনআরএসে আসার পরও দু’বোতল রক্ত দিতে হয়েছে। এমন ‘কো-মরবিডিটি’ যুক্ত রোগী যদি খাওয়া বন্ধ করেন তাহলে তো সমস্যা হবেই।
চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই শুরু হয় দ্বিজেনবাবুর কাউন্সেলিং। অনেক চেষ্টা চরিত্র করে দুপুরে খাওয়ানো হয়। কিন্তু দাদু সাফ জানিয়ে দেন, রাত থেকে আর তিনি খাবেন না। অনশন শুরু করবেন। এর পরই নাটকীয় মোড় নেয় পরিস্থিতি। কোভিড (COVID-19) আক্রান্ত হয়ে এনআরএসে ভর্তি হন দ্বিজেনবাবুর স্ত্রী বীণা দেবী। চিকিৎসকদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে মেডিক্যাল সুপার ও উপাধ্যক্ষ ডা. করবী বড়াল (Dr Karabi Baral) ‘দিদা’ বীণাদেবীকে দ্বিজেনবাবুর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
স্ত্রীকে দেখে হাসি ফোটে দ্বিজেনবাবুর রোগক্লিষ্ট মুখে। সরে আসেন অনশনের ধনুকভাঙা পণ থেকে। দিদা ভালবাসে দাদুর অনশন ভাঙানোর পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা। তাঁরা জানান, কোভিড আক্রান্ত অনেকে বয়স্ক রোগীর মধ্যেই এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অনেকেই রাগ-অভিমান করে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন। মনখারাপের জেরে অনেকের শরীরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এঁদের জন্য ভিডিও কলিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু, দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে? অনেকেই রোগশয্যায় বাড়ির লোককে পাশে চান। যেমন দ্বিজেনবাবু চেয়েছেন। এনআরএসের ভূমিকায় খুশি দ্বিজেনবাবুর ভাগ্নে তথা গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. শুভায়ু বন্দে্যাপাধ্যায়ও। পুরনো চেস্ট বিল্ডিংকেই কোভিড ইউনিট ওয়ানে রূপান্তরিত করা হয়েছে। তারই তিনতলায় রয়েছেন দ্বিজেনবাবু। দোতলায় বীণাদেবী। আজ ফের পিপিই পরে ‘দিদা’-কে নিয়ে ‘দাদু’-র কাছে যাবেন করবীদেবী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.