অভিরূপ দাস: শেষ সেপ্টেম্বরেও ৯০ জনের বেশি মানুষ আসত না। এখন সেই সংখ্যাটা ৪০০। তার সিংহভাগই আবার সংখ্যালঘু। জন্মের প্রমাণপত্র তোলার জন্য ভিড় লেগে গিয়েছে কলকাতা পুরসভায়। সিএএ লাগু হয়ে গিয়েছে। এনআরসি আতঙ্ক তাড়া করছে সবসময়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই অভয় দিক ভরসা পাচ্ছে না আমজনতা। কলকাতা পুরসভা থেকে জন্মের শংসাপত্র তোলার ঠাসা ভিড় তার প্রমাণ দিচ্ছে। এযাবৎ প্রতিদিন ১০০টি করে জন্মের শংসাপত্রের ফর্ম দেওয়া হত কলকাতা পুরসভা থেকে। সেই সংখ্যাটাই ২০০ করে দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হবে এই নিয়ম।
পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ সরকারি ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, এখন প্রতিদিন ২০০টি করে জন্মের শংসাপত্র দিতে হবে। শুধু পুরসভায় হেড অফিস নয় প্রতিটি বরো অফিস থেকেও দেওয়া হচ্ছে জন্মের শংসাপত্র। বরো অফিসগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনওভাবেই জন্মের শংসাপত্র দিতে দেরি করা যাবে না। কোনওরকম অভিযোগ যেন না আসে। পুরসভার কর্মীরা বলছেন, জন্মের ২১ দিনের মধ্যে যারা শিশুর জন্মের শংসাপত্র তুলছেন তাদের নর্মাল রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ বছর বাদে এখন নিতে আসছেন সেইসমস্ত প্রৌঢ়দের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণ-সহ আবেদন করতে হচ্ছে। পুরসভার কর্মীরা উপযুক্ত প্রমাণপত্র খতিয়ে দেখছেন। তাতেই সময় লাগছে।
জন্মের শংসাপত্র তোলার লাইনে সত্তর ছুঁইছুঁই বৃদ্ধ। ১৯৫০ সালে জন্মেছেন, আচমকা এখন কেন জন্মের শংসাপত্রের প্রয়োজন পড়ল? বৃদ্ধ রহমত আলি জানিয়েছেন, এখন সিএএ লাগু হয়েছে। আমি যে কলকাতায় জন্মেছি তার প্রমাণ তো দিতে হবে। পুরসভার এসএন ব্যানার্জি রোডের হেড অফিসে যাঁরা জন্মের শংসাপত্র নিতে আসছেন এমন অনেকেই জানিয়েছেন, ‘সিএএ লাগু হয়ে গিয়েছে। এটা এখন একটা আইন। মুখ্যমন্ত্রী যতই বলুক এ রাজ্যে সিএএ হবে না। আমরা ভরসা পাচ্ছি না। কাল কাগজ দেখতে চাইলে আমরা কোত্থেকে দেখাব। তাই আগেভাগে সমস্ত কিছু জোগাড় করে রাখছি।’ কলকাতা পুরসভার বার্থ সার্টিফিকেট বিভাগে কাজ করা এক কর্মী জানিয়েছেন, যেদিন থেকে সিএএ লাগু হয়েছে ভিড় অদ্ভুতভাবে বেড়ে গিয়েছে। পুরসভার কর্মী সংখ্যা কম। এই ভিড় সামলানো যাচ্ছে না। পুরসভায় বার্থ সার্টিফিকেট তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে তৌফিক আহমেদ নামে এক যুবক জানিয়েছেন, ‘টানা তিনদিন ধরে তিনি পুরসভায় আসছি। বার্থ সার্টিফিকেট তুলতে। কিন্তু লোক কম থাকায় ওরা দিতে পারছে না।’ কেন এত তাড়াহুড়ো? তৌফিকের কথায়, ‘আমার জন্মেরপ্রমাণ পত্র নিয়ে কোনও সমস্যায় পড়তে চাই না।’
ভিড়ের মধ্যে কারা রয়েছে? দেখা যাচ্ছে সংখ্যালঘুরাই বেশি আতঙ্কিত সিএএ নিয়ে। সংখ্যার অনুপাতে তারাই বেশি আসছে। আর আসছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। যাদের জন্ম ১৯৬০ সালের আগে এমন মানুষদেরই লাইন লেগে গিয়েছে পুরসভায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.