সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতা শহরে এবার তিন কাঠা জমির উপর ২০০০ বর্গফুটের বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করা যাবে পুরসভার অনুমোদিত কপি ছাড়াই। এলবিএস মারফত জমির মিউটেশন, পুরকরের নিষ্পত্তি এবং বৈধ নকশার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ফি অনলাইনে জমা দিয়েই নির্মাণকাজ শুরু করতে পারবেন মালিকরা। তবে ভিত হওয়ার পর কলকাতা পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করাতে হবে। যাতে বাড়ির কাঠামো, ঢালাইয়ের মশলা এবং নকশার শংসাপত্র নিতে হবে। যদি পুর আইন বিরোধী ও নকশার বাইরে কোনও বেআইনি নির্মাণ হয় তবে সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দেবে পুরসভা। ছোট বাড়ি তৈরির প্ল্যান অনুমোদন নিয়ে আমজনতার অযথা হয়রানি এড়াতে সোমবার এমনই ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
এর আগে কলকাতা পুরসভা সংলগ্ন এলাকা যাদবপুর ও বেহালায় তিন কাঠা বা তার চেয়ে কম জমিতে নতুন বাড়ি তৈরির সময় মিউটেশন লাগবে না বলে ঘোষণা করেছিলেন মেয়র। ঠিকা টেন্যান্সি আইন পরিবর্তন করে ঠিকা জমিতে প্রজা ও ভাড়াটিয়াদের বাড়ি তৈরির সুবিধা দেওয়ার পর এবার তিন কাঠা জমিতে বাড়ির প্ল্যান নিয়ে কার্যত বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়র। বিল্ডিং বিভাগ সূত্রে খবর, তিন কাঠা অর্থাৎ ২১৬০ বর্গফুট জমিতে সর্বাধিক ২০০০ বর্গফুটের বাড়ি তৈরি করতে পারবেন জমির মালিকরা। এই নয়া সিদ্ধান্তের জেরে বাড়ি তৈরির নকশা অনুমোদনের জন্য আর পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে হাঁটাহাটি করে জুতোর শুকতলা ক্ষয়াতে হবে না মালিকদের। ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে প্ল্যান নিয়ে বাড়ির মালিকদের দেখাও করতে হবে না। পুরোটাই এলবিএস মারফত বৈধ পথে করতে হবে। আগামী বছর পুরভোটের আগে মেয়রের এই সিদ্ধান্তে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জনসাধারণ সহজেই নিজেদের মাথার উপর ছাদ তৈরির সুযোগ পাচ্ছে। যা তৃণমূলের পালে বেশ হাওয়া জোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার পুরসভায় মেয়র পারিষদদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তও হয়েছে যে বাইপাস লাগোয়া এলাকায় বেআইনিভাবে জলাজমি ভরাট করে, অনুমোদন ছাড়া যে সমস্ত বাড়ি তৈরি হয়েছে, সেগুলি ভেঙে দেওয়া হবে। অবশ্য ওই বাড়িগুলি ভেঙে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে শীর্ষ আদালত থেকেই পুরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেয়র পারিষদের বৈঠকের পর মেয়র বলেন, “মূলত এলবিএস-কে মুচলেকা দিয়ে অনলাইনে সমস্তটা জমা করতে হবে। বাড়ির স্ট্রাকচারাল অর্থাৎ কাঠামোগত ছাড়পত্র জোগাড়ের পর ওই এলবিএস নিজের দায়িত্বেই নির্মাণ শুরু করাবেন। বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা পরিদর্শনে গিয়ে যদি দেখতে পান, মুচলেকায় যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে নির্মাণের কোনও মিল নেই, তখন ওই এলবিএস-এর লাইসেন্স বাতিল করা হবে।” পুরসভার নতুন এই সিদ্ধান্তে ছোট জমিতে বাড়ি তৈরি শুরুর কাজ অনেকটাই সহজ হওয়ায় খুশি সাধারণ মানুষ।
এতদিন বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে প্ল্যান অনুমোদনের জন্য কাউন্সিলর, বরো অফিস ও পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে বিস্তর হাঁটাহাটি করতে হত সাধারণ নাগরিকদের। অনেককে দালালের খপ্পরে পড়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খোয়াতে হয়েছে নিজের বাড়ি তৈরির স্বপ্নপূরণ করতে গিয়ে। কিন্তু এবার অনলাইনে সমস্ত নথি ও ফি জমা করলেই বাড়ি তৈরি শুরু করা যাবে ৩ কাঠা জমির উপর। মেয়র আগেই জানিয়েছিলেন, সংযোজিত এলাকা যাদবপুর ও বেহালায় তিন কাঠার কম জমির ক্ষেত্রে মিউটেশন ছাড়াই শুধুমাত্র পুরসভাকে তথ্য দিলেই বাড়ির নকশা অনুমোদন করাতে পারবেন। নিম্ন ও মধ্যবিত্তর কথা ভেবে ভূমি সংস্কার দপ্তরের লাল ফিতের ফাঁস সরিয়ে আরও এক দফা নাগরিক পরিষেবা বৃদ্ধি করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.